খুলনার ছয়টি আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রার্থীদের মধ্যে শুধু নিজের টাকায় নির্বাচন করছেন ১৩ জন। বাকি ৩৮ জন প্রার্থী নির্বাচনী ব্যয়ের বড় অংশই মেটাবেন ধার ও দানের টাকায়। শুধু দানের টাকায় নির্বাচন করবেন ৪ জন।
নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দেওয়া ফরমে অর্থপ্রাপ্তি ও সম্ভাব্য ব্যয়ের খাত পর্যালোচনা করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। হলফনামা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ প্রার্থী এসব ধার ও দান নেবেন পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়র কাছ থেকে। কিছু প্রার্থী দলীয় নেতা–কর্মীদের কাছ থেকেও অনুদান নেবেন। আওয়ামী লীগের ৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ৫ জনই নিজের টাকায় নির্বাচন করবেন। আর বিএনপি–জামায়াতের ১১ জন প্রার্থীর মধ্যে ৪ জন নিজের টাকায় নির্বাচনী খরচ মেটাবেন।
খুলনা–১ আসনে (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস, স্বতন্ত্র প্রার্থী ননী গোপাল মণ্ডল ও জাতীয় পার্টির সুনীল শুভ রায়ের সম্ভাব্য নির্বাচনী ব্যয় ২৫ লাখ টাকা। পঞ্চানন বিশ্বাস ও ননী গোপাল নিজেদের আয় থেকেই সম্পূর্ণ টাকা ব্যয় করবেন। আর সুনীল শুভ রায় জামাতার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা ধার ও নিজের ৫ লাখ টাকা নিয়ে নির্বাচন করবেন। বিএনপির আমীর এজাজ খান নির্বাচনের জন্য ২০ লাখ টাকা ব্যয় করবেন। এর মধ্যে নিজের ১০ লাখ ও ভায়রার কাছ থেকে দান হিসেবে নেবেন ১০ লাখ টাকা। কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী অশোক কুমার সরকার, ওয়ার্কার্স পার্টির গৌরাঙ্গ প্রসাদ রায়, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবু সাঈদ নিজের টাকার পাশাপাশি আত্মীয়স্বজন, জনগণ, অন্যদের দান ও ধারের টাকায় নির্বাচনী ব্যয় মেটাবেন।
খুলনা-২ আসনে (সদর-সোনাডাঙ্গা) আওয়ামী লীগের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল নিজের গচ্ছিত অর্থ থেকে ২৪ লাখ টাকা, বিএনএফের এস এম সোহাগ ২৪ লাখ ও জাকের পার্টির কে এম ইদ্রিস আলী নিজের আয় থেকে দেড় লাখ টাকা ব্যয় করবেন। বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু নিজের ২ লাখ, স্ত্রী ও শ্যালকের দেওয়া সাড়ে ৩ লাখ, অন্যের দান ১৩ লাখ ও অন্যের কাছ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা ধার করে নির্বাচন করবেন। ইসলামী আন্দোলনের আবদুল আওয়াল, গণফ্রন্টের মনিরা বেগম, মুসলিম লীগের এস এম ইসলাম আলী ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির এস এম এরশাদুর জামান নিজের টাকার পাশাপাশি আত্মীয়স্বজন ও অন্যদের কাছ থেকে ধার–দানে নির্বাচন করবেন।
খুলনা-৩ আসনে (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী) আওয়ামী লীগের বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ২২ লাখ টাকা খরচ করবেন। তিনি ভাইয়ের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ধার ও ভাইপোর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা দান পাবেন। বিএনপির রকিবুল ইসলাম বকুল নিজ আয় থেকে ৮ লাখ ও এস এম আরিফুর রহমান মিঠু নিজ আয় থেকে ২০ লাখ টাকা ব্যয় করবেন। জেএসডির আ ফ ম মহসিন, ইসলামী আন্দোলনের মুজ্জাম্মিল হক ও জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন নিজের আয়ের পাশাপাশি স্বজন ও অন্যদের কাছ থেকে ধার ও দানের টাকায় নির্বাচন করবেন। বাসদের জনার্দন দত্ত বাবা, ভাই ও অন্যদের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা পাওয়া দানে নির্বাচন করবেন।
খুলনা-৪ (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) আসনেবিএনপির শরীফ শাহ কামাল তাজ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আব্দুস সালাম মুর্শেদী নিজেদের তহবিল থেকে ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করবেন। বিএনপির আরেক প্রার্থী আজিজুল বারী হেলাল নিজের দেড় লাখ ও ভাই শেখ জাহিদুল বারীর কাছ থেকে সাড়ে ২৩ লাখ টাকা দান নিয়ে নির্বাচন করবেন।
খেলাফত মজলিসের এস এম সাখাওয়াত হোসাইন, জাতীয় পার্টির মল্লিক হাদিউজ্জামান, বিএনএফের শেখ হাবিবুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ইউনুস আহম্মেদ সেখ ও জাকের পার্টির আনসার আলী নিজের টাকার পাশাপাশি আত্মীয়স্বজন ও অন্যদের কাছ থেকে ধার–দান নিয়ে নির্বাচন করবেন। বাম গণতান্ত্রিক জোটের কে এম আলীদাদ সোয়া ২ লাখ টাকা দান পেয়ে নির্বাচনী ব্যয় মেটাবেন।
খুলনা-৫ আসনে (ডুমুরিয়া-ফুলতলা)আওয়ামী লীগের নারায়ণ চন্দ্র চন্দ নিজের ২৫ লাখ ও বিএনপির মামুন রহমান ২৪ লাখ টাকা ব্যয় করবেন। বিএনপির আরেক প্রার্থী মিয়া গোলাম পরওয়ার (জামায়াত) ভাই, বোন ও অন্যদের কাছ থেকে ১৯ লাখ টাকা দান ও নিজের ১ লাখ টাকা ব্যয় করবেন। বিএনপির গাজী আবদুল হক নিজের তহবিল থেকে ১০ লাখ ও ভাগনের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা দান হিসেবে নেবেন।
এ ছাড়া বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির চিত্ত রঞ্জন গোলদার, জাতীয় পার্টির শহীদ আলম ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমান নিজের আয়ের পাশাপাশি আত্মীয়স্বজন ও অন্যদের কাছ থেকে ধার-দানে নির্বাচন করবেন।
খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনে আওয়ামী লীগের আক্তারুজ্জামান বাবু নিজের আয় থেকে সাড়ে ২০ লাখ টাকা ও জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু নিজের তহবিলের সাড়ে ২৪ লাখ টাকা ব্যয় করবেন। বিএনপির এস এম শফিকুল আলম মনা স্ত্রী, পুত্র, কন্যার কাছ থেকে ১০ লাখ ও শ্যালকের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা দান নিয়ে নির্বাচন করবেন। বিএনপির আবুল কালাম আজাদ (জামায়াত) ভাই ও অন্যদের কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা ধার, নিজের ৫ লাখ, ভাই ও অন্যদের থেকে ৮ লাখ টাকা দান নেবেন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) আয়ুব আলী নিজের ২ লাখ টাকা, শ্বশুর ও ভাইয়ের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা ধার করে নির্বাচন করবেন। এ ছাড়া জাকের পার্টির শেখ মর্তুজা আল মামুন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী নূর আহমাদ, স্বতন্ত্র মো. আবদুল কাদের কামিল, স্বতন্ত্র প্রার্থী সুব্রত কুমার বাইন, বিএনএর মির্জা গোলাম আজম, কমিউনিস্ট পার্টির সুবাস চন্দ্র সানা, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর নিজের টাকার পাশাপাশি অন্যের ধার ও দানে নির্বাচন করবেন।