সমাজের বিশিষ্টজনেরা বলছেন, আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারা নিয়ে জনগণের মনে শঙ্কা রয়েছে। তাঁরা বলছেন, দলীয় সরকারের অধীনে, প্রধান বিরোধী দলের নেতা দুর্নীতির দায়ে কারাগারে—এমন বিশেষ পরিস্থিতিতে এবার নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনের আগে ও পরে পরিস্থিতি কেমন হবে—তা নিয়েও সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন।
আজ শনিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্টাডিজ মিলনায়তনে ‘নির্বাচনের রাজনীতি ও জনগণের ভোটাধিকার’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তাঁরা এসব কথা বলেন। বৈঠকের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস)। বৈঠকে রাজনীতিবিদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, সাবেক বিচারক, সাবেক সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা, আমলা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বৈঠকের সম্মানিত অতিথি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ ও প্রশাসন রাজনৈতিক দল দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। শত শত লোক হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে এসে দাঁড়িয়ে আছে জামিনের জন্য। তাঁরা নির্বাচন করবেন, না জেলে যাবেন?’
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তাতে বলা হয়, আগামী সংসদ নির্বাচনের বল এখন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কোর্টে। ইসিকে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি আগে থেকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘পর্যবেক্ষকদের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকতে বলার মতো কথার কারণে ইসিকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়।’
তবে নির্বাচন কমিশন কতটা সাহসী ভূমিকা রাখবে সেটি কমিশনের নিজস্ব ব্যাপার বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে যা যৌক্তিক, ইসি তাই করুক। আওয়ামী লীগ চায় সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হোক।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে সামাজিক ও রাজনীতিক পরিবেশ দরকার তা বর্তমানে উপস্থিত নেই। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, এ পর্যন্ত ইসির কার্যকলাপ দেখে বোঝা যাচ্ছে না তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সক্ষম এবং সেটি করার করার সদিচ্ছা তাদের আছে।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে দেশ ভয়াবহ সংকটের দিকে যাবে বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘গত ৫টি সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনে ইসি ছিল নির্বিকার।’
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সিজিএসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আতাউর রহমান। বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মইনুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এম এনামুল হক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের (ফেমা) সভাপতি মুনিরা খান, দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারক ইকতেদার আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সাবেক সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন, সিজিএসের ভাইস চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, মুক্তফোরামের প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদ রেজা চৌধুরী প্রমুখ। বৈঠক সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।