রাজধানীর শান্তিনিকেতনে ব্যবসায়ী শাহ মো. তোবারক হোসেন (৭০) হত্যায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে আজ শনিবার তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা মহাখালীতে তোবারকের মামা প্লাজা নামের একটি ছয়তলা মার্কেটের কর্মী ছিলেন। সম্প্রতি তাঁদের ছাঁটাই করা হয়েছিল। তাঁদের কাছ থেকে ২ লাখ ৪২ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন সোহেল, বাবু, হাসান, রাব্বী ও রিহান। গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একজন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আসামিদের উদ্দেশ্য ছিল তোবারককে হত্যা করে টাকা লুট করা। ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (পশ্চিম-ডিবি) অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহাদত হোসেন জানান, এই মামলার তদন্তভার ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা জানিয়েছেন, তোবারক হোসেন রগচটা স্বভাবের ছিলেন। প্রায়ই তাঁদের বকাঝকা করতেন। সম্প্রতি তাঁদের চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁরা হত্যার এ পরিকল্পনা করেন। গত বুধবার তাঁরা বাড্ডার নদ্দায় একটি বাসায় বসে তোবারককে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তোবারক মার্কেট থেকে প্রত্যেক মাসে পাঁচ লাখ টাকা ভাড়া পেতেন। ওই টাকা তিনি ব্যাংকে না রেখে বাসায় রাখতেন। এই তিনজন বিষয়টা জানতেন। তাই এই টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন তাঁরা। গ্রেপ্তার হাসানকে গত সপ্তাহে মার্কেটের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেন তোবারক। হাসানের সঙ্গে তোবারক ও গ্রেপ্তার অন্যদের পূর্বপরিচয় ছিল। তাই হাসানকে সঙ্গে নিয়ে এ হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। হাসান তোবারকের বাড়িতে নিচতলাতে থাকতেন। বুধবার ভোরে নামাজের সময় হাসান বাড়ির প্রবেশগেট খুলে দিলে অন্যরা প্রবেশ করে। তাঁরা চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটের ডোরবেল বাজালে তোবারকের সহকারী সাইফুল দরজা খুলে দেন। এরপর তাঁরা সাইফুল বেঁধে তোবারকের মাথা, কপাল, চোয়াল ও হাতে কোপ দেন। সাইফুলকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে হাসানই পুলিশকে ফোন দিয়ে তোবারককে হত্যার কথা জানান এবং দুর্বৃত্তরা তাঁকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে বলে পালিয়ে যান।
ডিবি সূত্র জানায়, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইলের সূত্র ধরেই তাঁদের গ্রেপ্তার করা গেছে। এ ঘটনায় আটজন জড়িত। বাকি তিনজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ব্যবসায়ী তোবারকের স্ত্রী পারভীন ইসমত আরা প্রথম আলোকে গতকাল শুক্রবার বলেছিলেন, সংসার-সন্তান ছেড়ে মার্কেটের লোকদের বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় স্বামীর (তোবারক হোসেন) সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটি হতো। পরে ২০১৭ সালে তিনি বড় মেয়ের সঙ্গে মহাখালীর ডিওএইচএসের বাসায় থাকতে শুরু করেন। তবে স্বামীর সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। তিনি বলেন, তাঁর স্বামীর সহকারী সেবাশুশ্রূষা করে প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেছিলেন। সাইফুল তাঁর স্বামীর বাসায়ই থাকতেন। সাইফুল টাকাপয়সা নয়ছয় করতেন। সম্প্রতি তিনি সাইফুলকে বাদ দিয়ে দিতেও চেয়েছিলেন। এতে সাইফুল ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পাঁচ দিন আগে হাসান নামের একজনকে মার্কেটের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি অভিযোগ করেন, হাসানকে নিয়েই সাইফুল তাঁর স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।