সীমান্তে চুরি, চোরাচালানসহ নানা ছোটখাটো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁরা। সীমান্তের ওপারে ভারতের ভেতরে ঢুকে সুপারি চুরি করতে গিয়ে খাসিদের গুলিতে সম্প্রতি একজনের মৃত্যুও হয়েছে। এরপর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে এসব ব্যক্তিকে অপরাধের পথ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিজিবির উদ্যোগের ফলে এলাকার ২৪ জন ব্যক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে আর কোনো অপরাধ করবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন। ফিরেছেন আলোর পথে।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী বাঁশতলা এলাকায় আজ মঙ্গলবার বিজিবির পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শিরোনাম দেওয়া হয় ‘আলোর পথে’। এসব ব্যক্তিকে অপরাধের পথ থেকে আলোর পথে ফুল দিয়ে বরণ করেন বিজিবির সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাকসুদুল আলম। অনুষ্ঠানে বিজিবির পক্ষ থেকে তাঁদের আর্থিক সহায়তা, রেশন, কর্মসংস্থানসহ নানাভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়।
বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ৭ জানুয়ারি দোয়ারাবাজার উপজেলার বাঁশতলা গ্রামের নুরু মিয়া (৩৫) নামের এক ব্যক্তি সীমান্তের ওপারে সুপারি চুরি করতে গিয়ে খাসিদের গুলিতে নিহত হন। এক সপ্তাহ পর ভারতীয় পুলিশ বাংলাদেশের পুলিশের কাছে নুরু মিয়ার লাশ হস্তান্তর করে। এরপরই বিজিবির পক্ষ থেকে ওই সীমান্ত এলাকায় যাঁরা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের এ পথ থেকে সরে আসতে নানাভাবে আলোচনা শুরু করে। এসব ব্যক্তির তালিকা করে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করতে দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। এরপর এলাকার ২৪ জন ব্যক্তি এসব অপরাধ ছেড়ে দিতে রাজি হন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ মঙ্গলবার বিকেলে বাঁশতলা এলাকায় বিজিবির পক্ষ থেকে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ওই ২৪ ব্যক্তি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অঙ্গীকার করেন।
এসব লোককে আলোর পথে ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রেখেছেন স্থানীয় বাংলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. খুরশেদ আলম। তিনি বলেন, ‘সীমান্তের ওপারে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব ব্যক্তি সুপারি, কাঠ চুরি করতে যেত। মাদকসহ নানা জিনিস আনত। এ জন্য বিজিবি ও বিএসএফের হাতে অনেকেই ধরা পড়ত। জেল খাটত। আমরা তাদের বিষয়টি বোঝানোর পর তারা এসব ছেড়ে দিতে রাজি হয়। এ রকম একটি ভালো কাজ করতে পেরে আমাদেরও ভালো লাগছে।’
বাঁশতলা গ্রামের বাসিন্দা আসকর আলী বলেন, ‘আমার একটা চায়ের দোকান ছিল। পুঁজির অভাবে সেটি বন্ধ। অভাবের কারণেই এসব করতাম। এখন স্যার (বিজিবির অধিনায়ক) বলছেন পুঁজি দেবেন। আমরা সবাই বলেছি আর কোনো অপরাধ করব না। এখন থেকে ভালো পথে চলব।’
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাকসুদুল হক জানান, তাঁরা দুজনকে ক্যাম্পে পাচক হিসেবে চাকরি দেবেন। একজনকে চায়ের দোকান দেওয়ার জন্য অর্থ এবং অন্যদের প্রাথমিকভাবে রেশন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। একই সঙ্গে ওই এলাকার সীমান্ত হাটে তাদের কাজ দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে সুপারিশ করা হবে। তিনি বলেন, সবাই অঙ্গীকার করেছেন আর কোনো অপরাধ করবেন না। এখন থেকে সৎ পথে থাকবেন, কাজ করে খাবেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিজিবির সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের কর্মকর্তা মেজর জালাল উদ্দিন জায়গীরদার, স্থানীয় বাংলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।