'আর ন কাঁদিস'

সকাল সকাল কাজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন রংমিস্ত্রি নুরুল ইসলাম (৩১)। চট্টগ্রাম নগরের পাথরঘাটা এলাকায় একটি ভবনে কাজ করার কথা ছিল তাঁর। তবে ওই ভবনে তাঁর আর যাওয়া হয়নি। ওই এলাকার অন্য একটি ভবনে গ্যাস পাইপলাইনে বিস্ফোরণ ঘটে। ওই সময় পাশের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন নুরুল। ওই ভবনের দেয়াল ধসে তাঁর ওপর পড়ায় ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

নুরুলের লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে সেখানে ছুটে আসেন তাঁর স্ত্রী সাদিয়া সুলতানা ও স্বজনেরা। তাঁরা আহাজারি করতে শুরু করেন।

নিহত নুরুল ইসলামের স্ত্রী সাদিয়া বেগম ও সন্তানের আহাজারি। ছবি: জুয়েল শীল

সাদিয়া সুলতানার কান্না থামছিল না। তাঁর মা মনোয়ারা বেগম ও বাবা সাইফুল ইসলামও বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। মেয়েকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আর ন কাঁদিস। আঁর নাতি হয়রান অই যার। (আর কাঁদিস না। আমার নাতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে)।’

নুরুল ইসলামের শ্বশুর সাইফুল ইসলাম জানান, কাজের জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলেন নুরুল। কিন্তু পথেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এখন মেয়ে কেমন করে বাঁচবে?

আড়াই বছর আগে নুরুল ইসলামের বিয়ে হয়। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। নগরের শাহ আমানত সেতু এলাকায় থাকতেন তাঁরা।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হতাহতদের স্বজনরা। ছবি: জুয়েল শীল

দুর্ঘটনায় নিহত আরেকজন হলেন পটিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অ্যানি বড়ুয়া (৪১)। তিনি স্কুলে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার শিকার হন। হাসপাতালে ছুটে আসা স্বামী পলাশ বড়ুয়া ও স্বজনেরা এমন মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। নিহত শিক্ষকের আত্মীয় প্রণব বড়ুয়া বলেন, এমন মৃত্যুতে সবাই স্তব্ধ। নিহত নারীর দুই ছেলে আছে।

আজ রোববার সকাল ৯টার দিকে পাথরঘাটার ব্রিক ফিল্ড রোডে ধনা বড়ুয়ার পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় গ্যাস পাইপলাইনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের পর একটি ভবনের দেয়াল ধসে রাস্তার ওপর ও আরেকটি ভবনের ওপর গিয়ে পড়ে। এতে ৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। হতাহত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।