জুরাইন কবরস্থানে শ্রমিক সংগঠনের নেতারা ফুল দিয়ে রানা প্লাজায় নিহত শ্রমিকদের প্রতি সম্মান জানান। শ্রদ্ধা জানাতে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার ছবি হাতে নিয়ে জুরাইন কবরস্থানে আসেন ঝর্ণা বেগম। তিনি একজন পোশাকশ্রমিক। কাজ করেন নারায়ণগঞ্জের একটি কারখানায়। সোহেল রানার ছবি দেখিয়ে ঝর্ণা বেগম বললেন, ভাবতেও খারাপ লাগে যে আজও রানার বিচার হলো না।
আজ বুধবার সকাল থেকে ব্যানার–ফেস্টুন হাতে নিয়ে দলে দলে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জুরাইন কবরস্থানে আসেন। কবরস্থানে ঢোকার প্রধান ফটক থেকে সমস্বরে স্লোগান দেন, ‘সোহেল রানার ফাঁসি চাই’। নারায়ণগঞ্জ থেকে জুরাইন আসেন পোশাকশ্রমিক জোছনা বেগম। কবরস্থানের পাশে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, ‘এক হাজারের বেশি শ্রমিক মারা গেল। অথচ আজও কেউ বিচার পেল না।’ জোছনা বেগম আরও বললেন, ‘আমরা আর কিছু চাই না, চাই শুধু রানার ফাঁসি।’
ছয় বছর আগে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে নিহত হন ১ হাজার ১৩৬ জন। গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন আরও ১ হাজার ১৬৯ জন। এ ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে অবহেলাজনিত মৃত্যু চিহ্নিত হত্যা মামলাটি করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে অপর মামলাটি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে আরেকটি মামলা করে।
প্রায় তিন বছর আগে হত্যার অভিযোগে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
ঢাকা জেলা পিপির দপ্তর থেকে গত রোববার বলা হয়েছে, অভিযোগ গঠনের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আটজন আসামি হাইকোর্টে আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে এই আটজনের পক্ষে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ আসে। ইতিমধ্যে ছয়জন আসামির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়েছে। কেবল সাভার পৌরসভার তৎকালীন মেয়র রেফায়েত উল্লাহ এবং তৎকালীন কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী খানের পক্ষে স্থগিতাদেশ বহাল আছে। রেফায়েত উল্লাহর স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে আগামী ৯ মে পর্যন্ত। আর মোহাম্মদ আলীর পক্ষে আগামী জুন মাস পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়।
ছয় বছরেও হত্যা এবং ইমারত নির্মাণ আইনের মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু না হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী ও ভুক্তভোগীরা।
সকালে জুরাইন কবরস্থানে আসেন শ্রমিকনেতা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মন্টু ঘোষ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের ছয় বছর পর বিচারের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সরকার গড়িমসি করছে। সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের ব্যাপারে তাড়াতাড়ি শুনানির জন্য উদ্যোগ নিতে পারে।’
ক্ষুব্ধ কণ্ঠে প্রবীণ শ্রমিকনেতা মন্টু ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ছয় বছরেও এত শ্রমিক হত্যা মামলার বিচার শেষ হয় না। এই আইনি জঠিলতা, এই হীনম্মন্য দৃষ্টিভঙ্গির তীব্র বিরোধিতা করছি।’ ছয় বছরে রানা প্লাজা ধসে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগ মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে জানান মন্টু ঘোষ। তিনি বলেন, ‘রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকদের চিকিৎসার নামে কাউকে কাউকে কোনো রকম চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এসব শ্রমিকের যে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা দরকার, সরকার সেদিকে নজর দিচ্ছে না।’
গার্মেন্টস কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রসহ কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে নিহত শ্রমিকদের প্রতি সম্মান জানানো হয়। রাজেকুজ্জামান রতন, মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ, সাইফুজ্জামান বাদশা প্রমুখ শ্রমিকনেতা জুরাইন কবরস্থানে আসেন।
আরও পড়ুন:-
ছয় বছরেও এগোয়নি হত্যার বিচার