বড় শখ ছিল শুভংকরের, সাইকেলে দেশের ৬৪টি জেলা ঘুরে দেখবেন। বাদ সাধলেন বাবা। বাধা পেলে বুদ্ধি খেলে! দেশের ৬৪ জেলার মাটি সংগ্রহ করে বাংলাদেশের মানচিত্র বানালে কেমন হয়। একসঙ্গে ৬৪ জেলার মাটি স্পর্শ করা যাবে। পাওয়া যাবে একসঙ্গে সারা বাংলার মাটির গন্ধও।
কিন্তু ৬৪ জেলার মাটি সংগ্রহ হবে কীভাবে? ফেসবুকের বন্ধুদের কাছে নিজ জেলার মাটি কুরিয়ারে পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানান শুভংকর। মাটির পরিমাণ বলে দিয়ে কুরিয়ারের খরচ পাঠানোর ইচ্ছেও প্রকাশ করেন। কিন্তু যাঁরা মাটি পাঠিয়েছেন, তাঁরা কেউ টাকা নিতে রাজি হননি।
কুরিয়ারে প্রথম মাটি আসে নাটোর থেকে। এক মাসের মধ্যেই ২০ জেলা থেকে মাটি চলে আসে শুভংকরের কাছে। ১২ জেলার মাটি নিজেই সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে মেহেরপুরের মুজিবনগরের, ঝিনাইদহের কবি গোলাম মোস্তফার বাড়ির, বাগেরহাটে ষাটগম্বুজ মসজিদ এলাকার, কক্সবাজারের হিমছড়ি পাহাড়ের, মাগুরায় সীতারাম রায়ের বাড়ির, পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ ক্যাম্পাস থেকে মাটি সংগ্রহ করেন শুভংকর। নিজ জেলা ফরিদপুরের মাটি সংগ্রহের ক্ষেত্রে একটু পক্ষপাতিত্ব করেছেন তিনি। ফরিদপুরের মাটি তিনি সংগ্রহ করেছেন নিজ গ্রাম বারাংকুলা থেকে। তাঁর মতে, ‘যে মাটিতে পা রেখে আমি পৃথিবী দেখেছি, ৬৪ জেলার মাটি দিয়ে মানচিত্র বানানোর স্বপ্ন দেখেছি; সেই গ্রামকে বাদ দিব কোন যুক্তিতে?’ শেরপুর, মুন্সিগঞ্জ ও ঝালকাঠির মাটি সংগ্রহে তাঁকে সাহায্য করেছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া।
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বুরাইচ ইউনিয়নের বারাংকোলা গ্রামের তরুণ শুভংকর পালের (২৩) বাবা পল্লিচিকিৎসক নিহার রঞ্জন পাল। মা অমৃতা পাল। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। বাড়িতে কাকা দিলীপ কুমার পাল মাটি দিয়ে বিভিন্ন মূর্তি গড়তেন। কাকার সঙ্গে মাটির কাজে হাত লাগাতেন শুভংকর। বললেন, ‘আমি যেকোনো মানুষের মুখ মাটি দিয়ে গড়ে দিতে পারি।’ এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্নাতক পাস করেছেন ‘ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া’ বিষয়ে।
শুভংকরের নির্মাণ করা বাংলাদেশের মানচিত্র দৈর্ঘ্যে ২৮, প্রস্থে ১৮ ইঞ্চি। মানচিত্রটি রাখা হয়েছে কাচঘেরা একটি কাঠের বাক্সে। মানচিত্রের প্রতিটি জেলা তৈরি হয়েছে সে জেলার মাটি দিয়ে।
শুভংকরের মা অমৃতা পাল বলেন, ‘ও যে কাজ করছে তা শুধু ওর নিজের জন্য নয়; আমাদের পরিবারের জন্য, এ দেশের জন্য গৌরবজনক।’