শফিক উদ্দিনের খেতের ধান যখন আধাপাকা, তখন পাহাড়ি ঢলের পানিতে তাঁর ধান পানির নিচে তলিয়ে যায়। সেটা গত মে মাসের কথা। তখনই ধান প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এরপর পানি কমে যায়। সেই ধান কেটে মাড়াই করে ঘরে তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু এবারের বন্যায় আর শেষ রক্ষা হলো না। ঘরের ভেতরে কেটে রাখা ধান পানির নিচে ডুবে ছিল পাঁচ দিন। তবু হাল ছাড়েননি শফিক উদ্দিন।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে শফিক উদ্দিন ওই ধানই রাস্তায় শুকাতে দিয়েছেন। কিন্তু ধান পানিতে ডুবে থাকার ফলে তাতে চারা গজিয়েছে। কিছু অংশ পচেও গেছে। সেই চারা গজানো পচা ধানও শুকাতে দিয়েছেন তিনি। প্রথম আলোকে বলেন, ‘ই ধান হুকাইয়া যতখান বালা পাইমু ওইটাই আল্লার কাছে শুকরিয়া।’
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার গৌরিনগর এলাকার বাসিন্দা কৃষক শফিক উদ্দিন। তিনি অন্যের কাছ থেকে দুই একর জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করেছিলেন। চাষ করেছিলেন তেপি আর বিআর-২৮ ধান। চাষের খরচের বিষয়ে তিনি বলেন, স্ত্রী ও মেয়েরা মিলে শ্রম দিয়ে চাষ করেছিলেন। তবে সার ও কীটনাশকের জন্য এক ব্যক্তির কাছে ছয় হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন।
বন্যার পানিতে ধান নষ্ট হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগের বানে খেতর ধান হক্কলটি পানিত ডুবি গেছিল। ইবার বন্যায় ঘরে মারা দেওয়া হখল ধান পানিয়ে পচাই লিছে।’
শফিক উদ্দিন বলেন, এই ধান দিয়ে তাঁর ও পরিবারের সারা বছরের খাবার হতো। তিনি বলেন, ‘আমার হগলতা শেষ। পাওনাদারে দুই দিন পরে আইয়া মাতাত বাড়ি দিব। তকন কিতা করমু বুজরাম না।’
বন্যায় সব জায়গায় পানি উঠে গিয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সব জাগাত পানি আছিল। ধান রাখার মতো হুকনা জায়গা পাইছি না। জান লইয়া ভাগছি।’
শফিক উদ্দিনের তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। বড় দুই ছেলে চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। তাদের উপার্জনেই কোনোমতে সংসারের বাজার সদাই হয় বলেও জানান তিনি।