করোনা প্রতিরোধে মাঠে কাজ করতে গিয়ে চিকিৎসক ও পুলিশের মতো আক্রান্ত হচ্ছেন সাংবাদিকেরাও। এখন পর্যন্ত ৩১টি গণমাধ্যমের অন্তত ৫৩ জন কর্মীর করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১ জন মারা গেছেন। আর সুস্থ হয়েছেন ১১ জন।
‘আমাদের গণমাধ্যম, আমাদের অধিকার’ নামের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক একটি স্বেচ্ছাসেবী গ্রুপ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। আক্রান্ত গণমাধ্যমকর্মীর প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেও প্রায় একই তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এর বাইরে আরও আক্রান্ত সংবাদকর্মী থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকায় ৪৩ জন ও ঢাকার বাইরে কাজ করেন ১০ জন। দৈনিক সময়ের আলোর নগর সম্পাদক হুমায়ুন কবির খোকন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তাঁর পরিবারের সদস্যরাও আক্রান্ত। আক্রান্তদের অধিকাংশের পরিবারের সদস্যরাও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি ১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভিতে। এর মধ্যে দুজন প্রতিবেদক, একজন বার্তা সম্পাদক, ছয়জন ক্যামেরাম্যান, একজন নিউজ প্রেজেন্টার, একজন মেকআপম্যান ও অনুষ্ঠান বিভাগের দুজনের ইতিমধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে। আরও কয়েকজনের পরীক্ষা করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ফলাফল জানা যায়নি।
এ বিষয়ে এনটিভির হেড অব নিউজ জহিরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, আক্রান্তের সঠিক সংখ্যা এখনই বলা যাচ্ছে না, পরীক্ষার সব ফল পাওয়া যায়নি।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম আলোর বিশেষ বার্তা সম্পাদক শওকত হোসেন গত শনিবার সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এ ছাড়া করোনা শনাক্ত হওয়া ঢাকার গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন যমুনা টিভি, এটিএন নিউজ ও বাংলাদেশের খবর-এর একজন করে প্রতিবেদক, দৈনিক সংগ্রাম এবং দীপ্ত টিভির একজন করে সংবাদকর্মী এবং ইনডিপেনডেন্ট টিভির একজন ক্যামেরাপারসন।
এর বাইরে ঢাকায় আক্রান্তদের মধ্যে আছেন দীপ্ত টিভির পাঁচজন, মাছরাঙা টেলিভিশনের সাধারণ শাখার একজন কর্মকর্তা, চ্যানেল আইয়ের অনুষ্ঠান বিভাগের একজন, নিউজ পোর্টাল বিবার্তার একজন সংবাদকর্মী, দৈনিক ইনকিলাব-এর একজন সংবাদকর্মী, দৈনিক জনতার একজন সংবাদকর্মী, দৈনিক কালের কণ্ঠ-এর একজন ফটোসাংবাদিক, আরটিভির বার্তাকক্ষের একজন সংবাদকর্মী, বাংলাভিশন ও দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ-এর একজন করে প্রতিবেদক, নতুন সময় টিভির (আইপিটিভি) একজন নিউজ প্রেজেন্টার, দৈনিক সময়ের আলোর চারজন সংবাদকর্মী, রেডিও আমার-এর এক সংবাদকর্মী, দৈনিক ইত্তেফাক-এর একজন প্রতিবেদক এবং দৈনিক আমার বার্তার সম্পাদক।
এ বিষয়ে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুল আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, সাংবাদিকদের ঝুঁকি কমানো ও নিরাপত্তার দায়িত্ব মালিকদের নিতে হবে। তাঁদের চিকিৎসা ও মারা গেলে যথাযথ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকার বাইরে সুস্থ হয়েছেন যমুনা টিভির নরসিংদী প্রতিনিধি, একাত্তর টিভির গাজীপুর প্রতিনিধি, ভোরের কাগজ-এর বামনা উপজেলা (বরগুনা) প্রতিনিধি ও দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ-এর কাপাসিয়া প্রতিনিধি। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে আক্রান্তদের মধ্যে আছেন নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা পত্রিকার সম্পাদক, রেডিও টুডের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, নিউজ পোর্টাল পূর্বপশ্চিমের জামালপুর প্রতিনিধি, আজকালের খবর-এর বামনা (বরগুনা) প্রতিনিধি, যশোরের লোকসমাজ-এর একজন সহসম্পাদক ও এসএ টিভির গাজীপুর প্রতিনিধি।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঝুঁকি কমাতে বিভিন্ন গণমাধ্যম সতর্কতামূলক নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান পালাক্রমে কর্মীদের অফিস ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করেছে। কোনো কোনো গণমাধ্যম আংশিক বা বেশির ভাগ কর্মীকে বাসা থেকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। প্রথম আলো পত্রিকা ও অনলাইনের শতভাগ কর্মী বাসায় থেকে কাজ করছেন, যথারীতি প্রকাশিত হচ্ছে প্রথম আলোর ছাপা সংস্করণ। ডেইলি স্টার-এর সাংবাদিক-কর্মীরাও বাসায় থেকে কাজ করছেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ঝুঁকি নিয়েই সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করছেন সাংবাদিকেরা। প্রথম দিকে নিরাপত্তার ব্যবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক নানা ঘাটতি ছিল। এখন সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালন করাটা জরুরি। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে, যা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সরকারের।