সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও বেসরকারি চ্যানেল এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় হওয়া মামলার বিচার শুরুর ৪২ মাসে ৩৯ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার ওই মামলায় তিনজন সাক্ষ্য দেন। এ নিয়ে মামলার ৩৯ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হলো। ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
মামলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এপিপি আফছারুল ইসলাম বলেন, সাক্ষীদের বাড়ি বিভিন্ন অঞ্চলে। তাঁরা নির্ধারিত দিন আদালতে উপস্থিত থাকেন না। সমন জারি হলেও সময়মতো পান না। এ কারণে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। ফলে বিচারকাজে দেরি হচ্ছে।
গতকাল বিকেলে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আল-মাহমুদ ফাজুল কবীরের আদালতে মো. রিপন, ঐশিক সিদ্দিকী ও পল্লব আহম্মেদ নামের তিনজন সাক্ষ্য দেন। এ সময় আদালতে আসামি বাসচালক জামির হোসেন উপস্থিত ছিলেন। শুনানিতে অংশ নেন এপিপি আফছারুল। তাঁকে সহযোগিতা করেন খান খালিদ আদনান, জেলা নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি এ কে এম নূরুল হুদা এবং জেলা বারের প্রবীণ আইনজীবী আজহারুল ইসলাম। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাধব সাহা।
খান খালিদ আদনান বলেন, দুর্ঘটনার সময় চালকের লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। তিনি লাইসেন্স বর্ধিতকরণ আবেদনের ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। এ ছাড়া অতিরিক্ত গতিতে বাসটি চালানো হয়ে থাকতে পারে। এসব কারণে প্রচলিত আইনে চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে। মামলাটিতে এত বেশি সাক্ষীর দরকার ছিল না। এতে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হয়েছে।
দুর্ঘটনার দিন মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শালজানা গ্রামে কাগজের ফুল চলচ্চিত্রের শুটিং স্পট দেখে ঢাকায় ফিরছিলেন তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ সহযাত্রীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁদের বহনকারী মাইক্রোবাসটির সঙ্গে চুয়াডাঙ্গাগামী চুয়াডাঙ্গা পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন নিহত হন। নিহত অন্যরা হলেন প্রোডাকশন সহকারী মোতাহার হোসেন, কর্মী জামাল হোসেন ও মাইক্রোবাসের চালক মোস্তাফিজুর রহমান। দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক শিল্পী ঢালী আল মামুন, তাঁর স্ত্রী দিলারা বেগম জলি ও তারেক মাসুদের সহকারী মনীশ রফিক আহত হন।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই দুর্ঘটনায় ঘিওর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) লুৎফর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে বাসের চালক জামির হোসেনের (৫০) বিরুদ্ধে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়। ওই থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফ-উল ইসলামকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১২ সালের ২১ মার্চ মানিকগঞ্জ জেলা দায়রা ও জজ আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ওই বছরের ১০ অক্টোবর জেলা ও দায়রা জজ আদালত অভিযোগ গঠন করেন। এর মধ্য দিয়ে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।
সূত্র আরও জানায়, ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি মামলাটি মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। মামলায় বাদী এসআই লুৎফর রহমান, ক্যাথরিন মাসুদ, ঢালী আল মামুন, দিলারা বেগম জলি, ইকবাল হোসেন, ব্যোমকেশ সরকার, অনীল বিশ্বাস, ফারুক হোসেন, সাথী সরকার, মো. রিপন, ঐশিক সিদ্দিকী, পল্লব আহম্মেদসহ ৩৯ জনকে সাক্ষী করা হয়। তাঁদের মধ্যে ব্যোমকেশ, ফারুক হোসেন ও সাথী সরকার মারা গেছেন।