অসুস্থ জেব্রাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে
অসুস্থ জেব্রাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে

৪টির মৃত্যু ‘সংঘর্ষে’, ৫টি সংক্রমণে

জেব্রাসহ অন্যান্য প্রাণীর নিরাপত্তায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের ১০টি প্রস্তাব। ভিন্ন জায়গা থেকে ঘাস সংগ্রহের পরামর্শ।

গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে নয়টি জেব্রার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বোর্ড বলেছে, চারটি জেব্রা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে এবং অপর পাঁচটি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে মারা গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে এ কথা জানান বোর্ডসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

তবে জেব্রা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটিয়ে মারা গেছে, এটা একদমই অস্বাভাবিক, এমন মনে করছেন এক বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ। তাঁর মতে, বেষ্টনীতে থাকা জেব্রার নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে মৃত্যুর রেকর্ড নেই।

২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পার্কে ৩১টি জেব্রা ছিল। জানুয়ারিতে ৯টি মারা যাওয়ার পর এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২। জেব্রার এই ‘রহস্যময়’ মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে গঠন করা হয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বোর্ড। মৃত প্রাণীর মরদেহের নমুনা নিয়ে পাঠানো হয় বিভিন্ন পরীক্ষাগারে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ও প্রাণীগুলোর মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি গঠন করবে। মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গতকাল সাফারি পার্কের ঐরাবতী রেস্টহাউসে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে বোর্ড বসে। বোর্ডের সভাপতি ছিলেন জাতীয় চিড়িয়াখানার সাবেক কিউরেটর ও চিফ ভেটেরিনারি কর্মকর্তা এ বি এম শহীদ উল্লাহ। বৈঠক শেষে জেব্রাসহ অন্যান্য প্রাণীর নিরাপত্তায় ১০টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাণীর ছাউনি জীবাণুমুক্তকরণ, সব প্রাণীকে টিকার আওতায় আনা, অধিকতর কাঁচা ঘাস না খাওয়ানো, চপার মেশিন দিয়ে ঘাস কেটে প্রাণীকে খাওয়ানো, যে ঘাস দেওয়া হচ্ছিল, সেটি বন্ধ করে আলাদা জায়গা থেকে ঘাস এনে বাকি জেব্রাগুলোকে খাওয়ানো, মাংসাশী প্রাণীর খাবারের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হওয়া, দানাদার খাদ্য পরিবেশনের আগে ফাঙ্গাস না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া, দর্শনার্থী বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ প্রাণীকে যেন খাবার দিতে না পারে, সেটি দেখা, স্পর্শকাতর প্রাণীর ওপর নজর রাখতে নাইট ভিশন ক্যামেরা স্থাপন করা, খালি জায়গায় ঘাস উৎপাদনের ব্যবস্থা করা।

জেব্রার শিং নেই। তাই নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ হলেও গুরুতর আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা নেই।
মোহাম্মদ মোস্তাফা ফিরোজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ।

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাব গণমাধ্যমকে জানান বিশেষজ্ঞ দলের সভাপতি এ বি এম শহীদ উল্লাহ। তিনি বলেন, এই প্রস্তাবগুলো অনুসরণ করলে শুধু জেব্রা নয়, পার্কের সব প্রাণীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা হবে।

প্রসঙ্গত, এই সাফারি পার্কে জেব্রাসহ কিছুর প্রাণীর জন্য ঘাস সরবরাহ করে মাহবুব ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

এ বি এম শহীদ উল্লাহ বলেন, ‘মৃত প্রাণীগুলোর শরীরে পাঁচ ধরনের ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। কোনো ভাইরাস পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ঘাসের মধ্যেই সমস্যা কি না, তা-ও জানা যায়নি। বেশ কিছু পরীক্ষার ফলাফল পেয়ে তা বিশ্লেষণ করেছি। কয়েকটি পরীক্ষার ফলাফল এখনো বাকি আছে। আপাতত যেখান থেকে ঘাস এনে খাওয়ানো হচ্ছে, সেই ঘাস বাদ দিয়ে অন্য জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হবে।’

জেব্রার মৃত্যুর কারণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ দলের বক্তব্য সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ মোস্তাফা ফিরোজ প্রথম আলোকে বলেন, সাফারি পার্কে জেব্রাগুলো একটা নির্দিষ্ট বেষ্টনীর ভেতর থাকে। বেষ্টনীতে থাকা জেব্রারা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়ায় না। তিনি বলেন, জেব্রার শিং নেই। তাই নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ হলেও গুরুতর আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা নেই।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রাপ্ত ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে মোস্তাফা ফিরোজ বলেন, এগুলো সবই জেব্রার খাবারের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যাকটেরিয়া। এসব ব্যাকটেরিয়ার কারণেও প্রাণীর মৃত্যু ঘটে। এ জন্য প্রাণীর খাদ্য ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেওয়া দরকার।

পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মেডিকেল বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাণীগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। তিনি বলেন, অচিরেই আরও আটটি জেব্রার বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেগুলোকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বাচ্চাগুলোর জন্ম হলে জেব্রার পাল সমৃদ্ধ হবে।