করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আজ সোমবার শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান।
এদিকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের গ্রীষ্মকালীন ছুটি এগিয়ে নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ১৮ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস–পরীক্ষা সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। ৩৬ জন শিক্ষকের অভিমতের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্কতার অংশ হিসেবে ১৮ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ১৮ মার্চ দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে জরুরি সভায় আজ এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম আবদুল লতিফ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১৮ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা ও আবাসিক হলগুলো বন্ধ থাকবে। তবে অফিসগুলো যথারীতি চালু থাকবে। ১৮ মার্চ বেলা ১১টার মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের হল ছাড়তে বলা হয়েছে। আগামী ১ এপ্রিল সকাল ৯টায় হল খুলে দেওয়া হবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় উপস্থিতি কমে আসছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, চুয়েটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন শুরু করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও বিবৃতি দিয়ে ছুটি ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এত দিন বলে আসছিল, এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু গতকাল রোববার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হবে, নাকি বন্ধ রাখা হবে, সেটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিষয়।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা মত দিয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া উচিত। ইতিমধ্যে করোনা–আতঙ্কে স্কুল–কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বড় অংশ ক্লাসে যাওয়া থেকে বিরত থাকছেন।
গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি কম ছিল। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম গতকাল তাঁর প্রতিষ্ঠানে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ উপস্থিতির কথা জানান। অনেক অভিভাবক সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফওজিয়া বলেন, গতকাল চতুর্থ শ্রেণির প্রভাতি শাখায় উপস্থিতি কম ছিল। আর দিবা শাখায় উপস্থিতি ছিল ৫০ শতাংশের বেশি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৬টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের মধ্যে অন্তত ৪০টির শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন। বুয়েটের শিক্ষার্থীরা আগের দিনের মতো গতকালও কোনো ক্লাস করেননি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাস বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সব বর্ষের শিক্ষার্থীরা আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (রুয়েট) শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আজ থেকে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদের শিক্ষার্থীরাও ক্লাস বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।