প্রধান দুই জোটের ৬০০ প্রার্থী

৩০ বছরের নিচে মাত্র চারজন

সানসিলা জেবরিন, নিজাম উদ্দিন, ইফরান ইবনে আমান, কুঁড়ি সিদ্দিকী
সানসিলা জেবরিন, নিজাম উদ্দিন, ইফরান ইবনে আমান, কুঁড়ি সিদ্দিকী

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান দুই জোটের মধ্যে ৩০ বছরের নিচে এমন প্রার্থী মাত্র চারজন। দুই জোটে ষাটোর্ধ্ব প্রার্থী আছেন ২৯০ জন। এবারের নির্বাচনে দুই জোটের সবচেয়ে বেশি ও কম বয়সী প্রার্থীর বয়সের পার্থক্য ৬৩ বছর।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সবচেয়ে বয়স্ক প্রার্থী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তাঁর বয়স ৮৮ বছর। আর সবচেয়ে কম বয়সী শেরপুর-১ আসনের বিএনপির প্রার্থী সানসিলা জেবরিন। তাঁর বয়স ২৫ বছর।

আইন অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ন্যূনতম বয়স ২৫ বছর। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামার সঙ্গে যুক্ত আয়কর বিবরণীতে প্রার্থীদের বয়স উল্লেখ হয়েছে। প্রথম আলো দুই প্রধান জোটের ৬০০ প্রার্থীর বয়স বিশ্লেষণ করেছে। দুই জোটই প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে তরুণ প্রার্থীদের চেয়ে বয়স্ক প্রার্থীদের প্রাধান্য দিয়েছে।

অথচ এবার দেশের প্রায় ২২ শতাংশ ভোটারের বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। এসব তরুণের বড় অংশ, প্রায় ১ কোটি ২৩ লাখ এবারই প্রথম ভোট দেবেন। তবে রাজনৈতিক দলগুলো তরুণদের প্রার্থী করতে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, তরুণ প্রার্থী কম হওয়ার মূল কারণ তরুণেরা রাজনীতিবিমুখ। এর জন্য বয়স্করাই দায়ী। হানাহানি, মারামারি, ঘৃণা, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন এবং নিশ্চিহ্নের রাজনীতির কারণে তরুণেরা রাজনীতিকে ভয় পান। বিশেষত, উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত তরুণেরা রাজনীতিতে আসতে চান না। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হলে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের পরিবর্তন জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

বিএনপির সবচেয়ে কম বয়সী প্রার্থী সানসিলা জেবরিন রাজধানীর একটি মেডিকেল কলেজের প্রভাষক। সানসিলা শেরপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. হযরত আলীর মেয়ে। এই আসনে বিএনপির মূল প্রার্থী ছিলেন হযরত আলী। কিন্তু কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণখেলাপির কারণে হযরত আলীর প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে—এ আশঙ্কায় দল হযরতের মেয়ে সানসিলা জেবরিনকেও বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়। সানসিলার বিপরীতে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদের হুইপ আতিউর রহমান। তাঁর বয়স ৬১ বছর।

সানসিলা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগের নির্বাচনগুলাতে এই আসনটি জোটের শরিকদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ ২২ বছর পর ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছে শেরপুরের মানুষ। একজন তরুণ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে বিজয়ী হলে তরুণদের কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দেব। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করব।’

বিএনপির ৩০ বছরের কম বয়সী আরেক প্রার্থী ঢাকা-২ আসনের ইরফান ইবনে আমান। ইরফান বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ আমানের ছেলে। দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আমান নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় তাঁর ছেলেকে দল মনোনয়ন দিয়েছে। পেশায় আইনজীবী ইরফান আমান ঢাকা জেলা বিএনপির সহসভাপতি।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৩০ বছরের কম বয়সী আরেক প্রার্থী টাঙ্গাইল-৮ আসনের কুঁড়ি সিদ্দিকী। তিনি ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীর মেয়ে। ঋণখেলাপের কারণে কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিল হলে দলের পক্ষ থেকে কুঁড়ি সিদ্দিকীকে ওই আসনে প্রার্থী করা হয়।

বিএনপিতে ৩১ থেকে ৪০ বয়সী প্রার্থী আছেন আটজন। ৪১ থেকে ৫০ বয়সের প্রার্থী ৫৮ জন। বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে ১০১ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০-এর মধ্যে। ষাটোর্ধ্ব আছেন ১৩০ জন। সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রার্থী নীলফামারী-১ আসনের রফিকুল ইসলাম। তাঁর বয়স ৮৭ বছর। তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভগ্নিপতি।

ধানের শীষের বয়োজ্যেষ্ঠ প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন গাইবান্ধা-৩ আসনের ৮৪ বছর বয়সী টি আই এম ফজলে রাব্বি চৌধুরী। তিনি ২২ ডিসেম্বর মারা যাওয়ায় এই আসনের নির্বাচন স্থগিত হয়ে গেছে। নতুন তফসিল অনুযায়ী, ২৭ জানুয়ারি এখানে নির্বাচন হবে। ফজলে রাব্বি ২০-দলীয় জোটের শরিক দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (জাফর) নেতা ছিলেন।

এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আবদুল মান্নান তালুকদারের বয়স ৮২ বছর, বরগুনা-২ আসনের খন্দকার মাহবুব হোসেন ৮০ বছর, টাঙ্গাইল-৫ আসনের মাহমুদুল হাসানের বয়স ৮০ বছর।

মহাজোটের সবচেয়ে বয়স্ক প্রার্থী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্ম ১৯৩০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখে। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ ১৯৮৩ সাল থেকে টানা নয় বছর ক্ষমতায় থাকেন। ১৯৯১ সালের পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাছে এই সামরিক শাসক ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ।

এরশাদ বাদে মহাজোটে ৮০ বছরের ঊর্ধ্বের আরেক প্রার্থী ফরিদপুর-২ আসনের সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। তাঁর বয়স ৮৩ বছর। তাঁর বিপরীতে এই আসনে নির্বাচন করছেন ৪৫ বছর বয়সী বিএনপির প্রার্থী শামা ওবায়েদ ইসলাম।

মহাজোটের সবচেয়ে কম বয়সী প্রার্থী নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিল। তাঁর বয়স ২৮ বছর। নিজাম উদ্দিন এবারই প্রথম নির্বাচন করছেন। নিজাম উদ্দিনের বাবা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিল। নওগাঁ-৫ আসনে নিজামের বাবা আটবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়েছিলেন পাঁচবার।

আওয়ামী লীগের আরেক তরুণ প্রার্থী বাগেরহাট-২ আসনের শেখ সারহান নাসের তন্ময়। সারহান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলালের ছেলে। স্নাতক পাস তন্ময়ের বয়স ৩১ বছর। বাগেরহাট-১ আসনে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন সারহানের বাবা ৫৭ বছর বয়সী শেখ হেলাল।

মহাজোটের আরেক তরুণ প্রার্থী জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। নড়াইল-২ আসনের প্রার্থী মাশরাফির বয়স ৩৫ বছর।