ফরিদপুর অঞ্চলের ৫টি জেলার জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যা ১৫টি। এসব আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন এক্যফ্রন্টের ৩০ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৯ জনই ব্যবসায়ী। অর্থাৎ ৬৩ শতাংশ প্রার্থী ব্যবসায়ী। মাত্র দুজন প্রার্থীর পেশা রাজনীতি। এই দুজনই মহাজোটের প্রার্থী। এ ছাড়া মিশ্র পেশা হিসেবে রাজনীতি ও ব্যবসা উল্লেখ করেছেন মহাজোটের আরও দুজন প্রার্থী।
নির্বাচন কমিশনে ৩০ প্রার্থীর জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এ অঞ্চলের ১৫টি আসনের মধ্যে ফরিদপুরে ৪টি, রাজবাড়ীতে ২টি, গোপালগঞ্জে ৩টি, শরীয়তপুরে ৩টি ও মাদারীপুরে ৩টি আসন রয়েছে। এখানে মহাজোটের সব প্রার্থী আওয়ামী লীগ ও এক্যফ্রন্টের সব প্রার্থী বিএনপির। ব্যবসায়ী প্রার্থীদের মধ্যে মহাজোটের ৮ ও ঐক্যফ্রন্টের ১১ জন। তিনজন প্রার্থীর পেশা কৃষি। তাঁদের মধ্যে মহাজোটের দুই ও ঐক্যফ্রন্টের একজন। পেশাজীবী হিসেবে আছেন উভয় জোটের দুজন করে। হলফনামায় কৃষি ও ব্যবসা পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের একজন প্রার্থী। তবে এখানে আইনজীবী হিসেবে কোনো প্রার্থী নেই। অন্য পেশায় আছেন একজন প্রার্থী।
এ সম্পর্কে টিআইবির অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ফরিদপুর শাখার সভাপতি রমেন্দ্রনাথ রায় বলেন, এটি রাজনীতির জন্য পুরোপুরি সুস্থ ধারা নয়। রাজনীতি করবেন বুদ্ধিজীবী, আইনজীবীসহ সমাজের সচেতন জনগোষ্ঠী। ব্যবসায়ীদের কাজ রাজনীতি হতে পারে না। তাঁরা ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন। রাজনীতিতে সময় দেওয়ার সুযোগ তাঁদের কম।
রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা উচিত বলে মনে করেন রমেন্দ্রনাথ। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দল মনোনয়ন বিক্রি করে, চাঁদা তোলে। যিনি যত বেশি চাঁদা দিতে পারেন, তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার সময় অগ্রাধিকার বিবেচনা করা হয়। এ কারণে নির্বাচনে ব্যবসায়ী প্রার্থীর সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে। আজ সামাজিক পরিস্থিতি এমন একটি জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, সেখানে শুধু নীতি ও আদর্শ থাকলেই ভোটে জেতা যায় না। এর জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। যদি নীতি–আদর্শই ভোট নিয়ন্ত্রণ করত, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না।
রমেন্দ্রনাথ রায় আরও বলেন, সমাজে অর্থ দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ফলে উন্মুক্ত রাজনীতির চর্চা সঠিকভাবে হতে পারছে না। নির্বাচনে প্রচুর টাকার প্রয়োজন হয় বলে উপযুক্ত অনেক লোক নির্বাচনে আসেন না। ফলে দিনে দিনে রাজনীতি ব্যবসায়ীদের জিম্মায় চলে যাচ্ছে। এ প্রবণতা বন্ধ করতে হলে দেশে সুস্থ ধারার রাজনীতির চর্চা করা জরুরি।