একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে (পীরগঞ্জ–রানীশংকৈল) তিন সাবেক সাংসদকে হারিয়ে বিএনপির প্রার্থী জাহিদুর রহমান বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। রংপুর বিভাগের মধ্যে তিনিই একমাত্র বিএনপির প্রার্থী, যিনি জয়ী হতে পেরেছেন। ১৯৯১ সাল থেকে তিনি নির্বাচন করছেন। দীর্ঘ ২৭ বছর পর মানুষের সহানুভূতির কারণে তিনি জয়ী হয়েছেন।
পীরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহাবুব আলম বলেন, ‘এ আসনে এবার মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ওয়ার্কার্স পার্টির লোককে নৌকা প্রতীক দিয়ে মনোনয়ন দেওয়াটাই হয়েছে বড় ভুল। এ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি ছিল। আওয়ামী লীগের নেতা ইমদাদুল হককে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে না দিয়ে মহাজোট থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়া হলে কোনো শক্তিই নৌকাকে হারাতে পারত না। তা ছাড়া এ আসনের একটি বাড়িও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে বাড়িতে বিএনপির জাহিদুর তিন-চারবার যাননি। এ জন্য বিএনপি-জামায়াত ছাড়াও অনেক ভোটার তাঁকে সহানুভূতির ভোট দিয়েছেন।’
পীরগঞ্জ পৌর শহরের ব্যবসায়ী সুলতান আলমগীর সরকার বলেন, ‘জাহিদুর রহমান তাঁর অনেক সম্পদ বিক্রি করে বিএনপির রাজনীতি করছেন। ২৫-২৬ বছর ধরে নির্বাচন করতে গিয়ে তিনি দুই উপজেলার সব জায়গার মানুষের সঙ্গে মিশে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। এবার মানুষ দল বিবেচনা করে নয়, তাঁর প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েই তাঁকে ভোট দিয়েছেন। এ জন্যই তিনি এবার জয়ী হয়েছেন।’
১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের মকলেসুর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে সাংসদ হন। ওইবার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান বিএনপি থেকে প্রথমবারের মতো ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে পঞ্চম হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইমদাদুল হক ৫৫ হাজার ৯৫৩ ভোট পেয়ে সাংসদ হন। সেবার বিএনপির প্রার্থী ছিলেন আবদুল মালেক। ২০০১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ লাঙ্গল প্রতীকে ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে নির্বাচন করে সাংসদ হন। সেবার বিএনপির প্রার্থী জাহিদুর রহমান ৮ হাজার ৩৫৯ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন জোটবদ্ধভাবে হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা ইমদাদুল হক আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েও দলীয় নির্দেশে তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। সেবার মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী জাহিদুর রহমান ৪৬ হাজার ৫৪৫ ভোট পান। ২০১৪ সালের দশম নির্বাচনে বিএনপি ভোট বর্জন করে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে চতুর্মুখী লড়াই হয়েছে। নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা মো. ইয়াসিন আলী, জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক সাংসদ হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ, সাবেক সাংসদ জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ইমদাদুল হক এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী মো. জাহিদুর রহমানের মধ্য তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়।
পীরগঞ্জ ও রানীশংকৈল উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার সূত্রমতে, বিএনপির প্রার্থী জাহিদুর রহমান (ধানের শীষ) পীরগঞ্জ উপজেলায় ৫০ হাজার ৭৮৯ এবং রানীশংকৈল উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৩৭ হাজার ৭২১ মিলে ৮৮ হাজার ৫১০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ইমদাদুল হক পীরগঞ্জ উপজেলায় ৬৬ হাজার ৭৯২ ভোট এবং রানীশংকৈল উপজেলায় ১৭ হাজার ৬০৩ মিলে ৮৪ হাজার ৩৮৫ ভোট পান। এ ছাড়া মহাজোটের প্রার্থী মো. ইয়াসিন আলী (নৌকা) পীরগঞ্জ উপজেলায় ১২ হাজার ৫৩২ এবং রানীশংকৈল উপজেলায় ২৫ হাজার ৫৩১ মিলে ৩৮ হাজার ৬৩ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ (লাঙ্গল) পীরগঞ্জ উপজেলায় ১৬ হাজার ২৭৪ এবং রানীশংকৈল উপজেলায় ১০ হাজার ৯০৮ মিলে ২৭ হাজার ১৮২ ভোট পেয়ে চতুর্থ হন। তা ছাড়া এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোপাল চন্দ্র রায় (সিংহ) ৫৪৮, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী নাজিমউদ্দীন আহম্মেদ (হাতপাখা) ১ হাজার ৫৩, বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থী প্রভাত সমীর শাহজাহান আলম (কাস্তে) ৯৭০ এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী মো. শাফি আল আসাদ (আম) ১০৯ ভোট পেয়েছেন।