লালমনিরহাট–১ আসন

২২ বছর পর মুখোমুখি আ.লীগ-বিএনপি

মোতাহার হোসেন ও হাসান রাজীব
মোতাহার হোসেন ও  হাসান রাজীব

দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ। সন্ধ্যা নামলে সরব হয়ে ওঠে রেস্তোঁরা, চায়ের দোকান। আলোচনা চলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের নিয়ে। কথা হচ্ছে লালমনিরহাট-১ আসনের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সাংসদ মোতাহার হোসেন। আর বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান রাজীব প্রধানকে। ফলে ২৩ বছর পর পাটগ্রাম-হাতীবান্ধা নিয়ে গঠিত লালমনিরহাট-১ আসনে নৌকা-ধানের শীষের লড়াই জমে উঠবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সাংসদ নির্বাচিত হন প্রয়াত কাজী নুরুজ্জামান। এরপর ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আবদুর ছাত্তার ও হাসানুজ্জামান নির্বাচন করেন। ২০০১ ও ২০০৮ সালে বিএনপির চারদলীয় ঐক্যজোটের শরিক দল জামায়াতকে ছেড়ে দেয়। তবে একবারও জামায়াতের প্রার্থীরা বিজয়ী হতে পারেননি। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির নেতা–কর্মীরা দলীয় প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। নেতা-কর্মীদের এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ বছর পর বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান রাজীব প্রধানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এই খবর পাওয়ার পর দুই উপজেলার বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা চাঙা হয়ে উঠেছেন। অনেককে মাঝে আনন্দ–উল্লাস প্রকাশ করার পাশাপাশি মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা গেছে। ফলে দীর্ঘদিন পর এবার এই দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লড়াই দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ভোটাররা।

জানতে চাইলে পাটগ্রাম পৌর বিএনপির সভাপতি সালাউজ্জামান বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর আমাদের দলীয় প্রার্থী পাওয়ার দাবি পূরণ হয়েছে। এই খবরে দলের নেতা-কর্মীরা খুব খুশি হয়েছেন। তাঁরা দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালাবেন।’

পাটগ্রাম পৌর ছাত্রদলের সভাপতি জিয়াউল হক বলেন, ‘আমরা দুই উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীসহ ধানের শীষ প্রতীকের সমর্থক বিগত কয়েকটি নির্বাচনের চেয়ে এখন অনেক উজ্জীবিত। কারণ এবার আমরা আমাদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি।’

বিএনপির কর্মী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘দলীয় প্রার্থী হিসেবে হাসান রাজীব ধানের শীষ প্রতীক পাওয়ায় আজ আমরা আনন্দিত। দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা এখন চাঙা। মনোবল নিয়ে ভোটের মাঠে কাজ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।’

হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনয়নের বিএনপির আহ্বায়ক আবদুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন জামায়াতের প্রার্থী থাকায় বিএনপির সাধারণ সমর্থকদের ভোট পেত না। এবার বিএনপির দলীয় প্রার্থী দেওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎফুল্ল ভাব দেখা যাচ্ছে।

১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সাংসদ মোতাহার হোসেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কাছে হেরে গিয়েছিলেন। তবে ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের প্রার্থী জামায়াতের আবু হেনা মোহাম্মদ এরশাদ হোসেন ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াত নেতা হাবিবুর রহমানকে হারিয়ে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন।

এই আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য লালমনিরহাট জেলা সহকারী রিটানিং কর্মকর্তার কাছ থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন পাটগ্রাম উপজেলার জামায়াত নেতা আবু হেনা মোহাম্মদ এরশাদ হোসেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন।