স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গতকাল রোববার জানিয়েছেন, তাঁরা করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারি অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী বছরের মধ্যে দেশের ১৭ কোটি জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকা দেওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন।
খুরশীদ আলম বলেন, ‘আমরা ২০২২ সালের মধ্যে দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করছি।’
বাসসের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, আগামী বছরের জুনের মধ্যে বাংলাদেশ প্রায় ১৪ কোটি ডোজ টিকা কিনতে যাচ্ছে। অন্যদিকে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পরবর্তী মাসগুলোতে প্রয়োজনীয় বাকি টিকা সংগ্রহ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে ইতিমধ্যে টিকা ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, চীনের সিনোফার্ম থেকে ৩ কোটি, রাশিয়ার স্পুতনিক–ভি ১ কোটি, জনসন অ্যান্ড জনসন ৭ কোটি, যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ৬৫ লাখ ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা থেকে ৩০ লাখ টিকা পাওয়ার চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৬১ লাখ করোনার টিকা সংগ্রহ করেছে। ২৫ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৭৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। ৪৩ লাখের বেশি মানুষ টিকার দ্বিতীয় ডোজ পেয়ে কোর্স শেষ করেছেন। এখন পর্যন্ত নিবন্ধিত মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ১৮ লাখ।
খুরশীদ আলম বলেন, টিকা আসার পর গ্রামাঞ্চলেও একটি পূর্ণ মাত্রায় টিকাকরণ প্রচার শুরু করা হবে। তাঁরা খুব শিগগির এই টিকাগুলো পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষকে টিকা দেব। ২০২২ সালের মধ্যে ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ১৩ কোটি মানুষকে টিকাদান অভিযান ত্বরান্বিত করতে প্রাপকদের নিবন্ধনের জন্য বিকল্প উপায় অনুসন্ধান করা হচ্ছে।’
করোনাভাইরাসের মারাত্মক ডেলটা ভেরিয়েন্টের সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে কর্তৃপক্ষ টিকা গ্রহণকারীদের বয়সসীমা ৩০ থেকে কমিয়ে ১৮ বছর করার এক দিন পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছ থেকে এমন মন্তব্য এল। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক শনিবার এ সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। তিনি আইসিটি বিভাগকে জাতীয় সুরক্ষা অ্যাপটি সংশোধন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
৫৫ বছর বা এর বেশি বয়সী ব্যক্তিদের প্রাথমিকভাবে টিকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। গণটিকাকরণ চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু করা হয়। এরপর তিনবার টিকা গ্রহণকারীদের বয়সসীমা পরিবর্তন করা হয়।
কোভিড-১৯-বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেছেন, প্রতি মাসে দেশের এক কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে। যার অর্থ প্রতিদিন চার লাখ মানুষ টিকার সুবিধা পাবেন।
মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, বিভিন্ন সংস্থার টিকার নির্দিষ্ট কার্যকারিতার সময়কাল থাকায় নিবন্ধনপ্রক্রিয়া দ্রুত করার জন্য তা (নিবন্ধনপ্রক্রিয়া) শিথিল না করা হলে টিকাকরণ প্রচারাভিযান ফল দেবে না।
কোভিড-১৯-বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি বলেন, মহামারির সবচেয়ে খারাপ আক্রমণ সত্ত্বেও ভারত এখন পর্যন্ত ৪৩ কোটি মানুষকে টিকা দিয়েছে। কারণ, তারা দ্রুত টিকা দেওয়ার অভিযান চালাচ্ছে। দ্রুত টিকাকরণ সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার উভয়ই হ্রাস করবে।