মৎস্য অধিদপ্তর

১ যুগ অকেজো ২ জাহাজ, বছরে গচ্চা ২৪ লাখ টাকা

অকেজো ঘোষণার পর বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। সংরক্ষণে খরচ হচ্ছে অর্থ।

বছরের পর বছর অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকা জাহাজ। সম্প্রতি কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে মৎস্য বন্দরে
ছবি: প্রথম আলো

মৎস্য অধিদপ্তরের আওতাধীন চট্টগ্রামের সামুদ্রিক মৎস্য জরিপ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের দুটি জাহাজ অকেজো ঘোষণার পর প্রায় ১২ বছর ধরে ফেলে রাখা হয়েছে। গবেষণার কাজে ব্যবহৃত এ জাহাজ দুটি ফেলে রেখে বছরে ২৪ লাখ টাকার বেশি গচ্চা দিচ্ছে অধিদপ্তর। এ ছাড়া ফেলে রাখায় জাহাজ দুটির মূল্যও কমছে।

অকেজো জাহাজ দুটি হলো আর ভি অনুসন্ধানী ও আর ভি মাছরাঙা। মৎস্য অধিদপ্তর এই জাহাজ দুটি দিয়ে একসময় সাগরে মাছের জরিপ পরিচালনা করত।

সরকারের মোটরযান, নৌযান, কম্পিউটার ও অফিসে ব্যবহৃত অন্যান্য যন্ত্রপাতি অকেজো ঘোষণাকরণ ও নিষ্পত্তির নীতিমালার ১০-এর ৩ ধারা অনুযায়ী, ‘অকেজো ঘোষিত নৌযান/হালবডি/ইঞ্জিন সিল্ড টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রয় করা যাইবে’। নথি ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮০-২০০১ সাল পর্যন্ত অনুসন্ধানী ও ১৯৮৬-১৯৯৭ সাল পর্যন্ত মাছরাঙা জাহাজ দিয়ে সমুদ্রে মাছ জরিপের কাজ করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। ২০০১ থেকে অনুসন্ধানী ও ১৯৯৭ সাল থেকে মাছরাঙা আর ব্যবহার করা হয়নি। এরপর যথাক্রমে ৯ ও ১৩ বছর ফেলে রাখার পর ২০১০ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জাহাজ দুটিকে অকেজো ঘোষণা করে ও নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করতে বলে। এরপর প্রায় ১২ বছর হতে চললেও জাহাজ দুটি বিক্রি করতে পারেনি মৎস্য অধিদপ্তর।

‘আমরা যে শর্তে জাহাজ দুটি দিতে চাই, সেই শর্তে তারা নিতে চায় না।’
মো. শরীফ উদ্দিন, চট্টগ্রামের সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পরিচালক (সামুদ্রিক) ও সামুদ্রিক মৎস্য জরিপ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা

যেভাবে অর্থ অপচয়

সামুদ্রিক মৎস্য জরিপ ব্যবস্থাপনা ইউনিট জাহাজ দুটি ফেলে রেখে শেষ দুই অর্থবছরে প্রায় সাড়ে ৪৯ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে। সূত্র বলছে, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) চট্টগ্রাম মৎস্য বন্দরে রাখা আছে জাহাজ দুটি। গত দুই বছরে ওই দুটি জাহাজ সংরক্ষণে চট্টগ্রাম মৎস্য বন্দরকে প্রায় ২৪ লাখ টাকা দিতে হয়েছে অধিদপ্তরের। এ ছাড়া দুই লাখের বেশি ভ্যাট ও আয়কর বাবদ এক লাখ টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে জাহাজ সংরক্ষণের জায়গায় নিয়মিতভাবে দায়িত্ব পালন করছেন ১১ জন ডেকহ্যান্ড শ্রমিক ও ৩ জন স্থায়ী কর্মচারী। গত দুই বছরে দৈনিক ৫৭৫ টাকা হারে ১১ জন শ্রমিকের পেছনে ৪ লাখ টাকার বেশি এবং স্থায়ী ৩ কর্মচারীকে প্রায় ১৮ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। এই দুই বছরে এভাবে প্রায় সাড়ে ৪৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।

সংকট যেখানে

অকেজো ঘোষণার বছরই দুটি জাহাজ বিক্রির উদ্যোগ নেয় মৎস্য অধিদপ্তর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, ২০১০ সাল থেকে আর ভি অনুসন্ধানী জাহাজটি বিক্রির জন্য নয়বার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। নবম দরপত্র আহ্বানের কাজ চলাকালে ২০১৫ সালে অষ্টম দরপত্রে ১ কোটি ২০ লাখ ১০ হাজার ৫০০ টাকায় জাহাজটি কিনে নেয় মেসার্স আদান ট্রেডিং।

অন্যদিকে ২০১৯ সালে ৪৫ লাখ ৫ হাজার টাকায় আর ভি মাছরাঙা জাহাজ কিনে নেয় মেসার্স অ্যাককেড এন্টারপ্রাইজ।

কিন্তু বিক্রি চূড়ান্ত হওয়ার পর জাহাজ দুটি দিয়ে মাছ ধরা যাবে না—এমন শর্ত জুড়ে দেয় মন্ত্রণালয়। এতে জাহাজ দুটি নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং উচ্চ আদালতে মামলা করে ওই দুই প্রতিষ্ঠান। মামলা দুটি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি এবং উচ্চ আদালতে মামলা করে।

চট্টগ্রামের সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পরিচালক (সামুদ্রিক) ও সামুদ্রিক মৎস্য জরিপ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিন এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যে শর্তে জাহাজ দুটি দিতে চাই, সেই শর্তে তারা নিতে চায় না।’

মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ মাহবুবুল হক সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, মামলা দুটি নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া দরকার।