প্রায় আড়াই মাস পর আগামী ১ জুন থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে লাইট চলাচল শুরু হবে। তবে সীমিত পরিসরে ঢাকা থেকে তিনটি রুটে চলবে। এগুলো হলো চট্টগ্রাম, সিলেট ও সৈয়দপুর।
আজ বৃহস্পতিবার একথা জানান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো মফিদুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট ও সৈয়দপুর রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। এ তিনটি রুটে সর্বোচ্চ প্রতিদিন ১৪টির মত ফ্লাইট চলবে। বাকি চারটি বিমানবন্দর যশোর, কক্সবাজার, রাজশাহী ও বরিশালে স্বাস্থ্যকর্মী এবং আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম যুক্ত করা হবে। এরপর পর্যাক্রমে এসব রুটেও ফ্লাইট চালু করবে। তবে এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে একটি ফ্লাইট নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাবে।
জানা গেছে, প্রতিটি ফ্লাইটে ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে ভাড়া বৃদ্ধি করা হবে কিনা, জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, কম যাত্রী নিয়ে ফ্লাইট চলাচল করবে। তবে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।
করোনাভাইরাসে কারণে গত ২১ মার্চ থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাব না কমায় কয়েক দফা এ নিষেধাজ্ঞা বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০ মে পযর্ন্ত এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে।
তবে ১০ মে বেবিচকের এক সার্কুলারে ভবিষ্যতে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করে নিরাপদে বিমান চলাচল করতে যাত্রী, বিমানবন্দর, বিমান সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের মোট ৩৫টি নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) নির্দেশনা অনুযায়ী করোনাভাইরাসসহ স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়িয়ে এ নির্দেশনা তৈরি করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে যাত্রীদের একটি ফরম দেওয়া হবে। ফরমে যাত্রীর নাম, বয়স, লিঙ্গ, জন্মতারিখ, বর্তমান ঠিকানা, এয়ারলাইনসের নাম, ফ্লাইট নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, শরীরের তাপমাত্রা, মোবাইল ও ই-মেইল নম্বর পূরণ করতে হবে। একই সঙ্গে ফরমে তিনটি প্রশ্নে হ্যাঁ অথবা না টিক দিয়ে উত্তর দিতে হবে। এক নম্বর প্রশ্নে থাকবে, 'আপনার (যাত্রী) কি জ্বর বা কফ হচ্ছে?' দ্বিতীয় প্রশ্নে থাকবে, 'আপনার কি জ্বর এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে?' এবং তৃতীয় প্রশ্নে থাকবে, 'গত ১৪ দিনে কোভিড-১৯ বা এই রোগের কোনো উপসর্গ থাকার কারণে আপনাকে কোনো বিমানবন্দরে বোর্ডিং থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে কি না।'
এই তিন প্রশ্নের যেকোনো একটির উত্তর 'হ্যাঁ' হলে যেকোনো যাত্রীকে আর ফ্লাইটে উঠতে দেওয়া হবে না। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী ওই যাত্রীকে পরবর্তী চিকিৎসা নিতে হবে। তবে এই তিন প্রশ্নের উত্তর না হলেও যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা মাপা হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি হলে তাঁকে আর ফ্লাইটে উঠতে দেওয়া হবে না। চেক-ইনের সময় কাউন্টার ও আশপাশের সহযোগীদের সার্বক্ষণিক মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, ডিস্পোজেবল ক্যাপ পরতে হবে। প্রতিটি কাউন্টারের পাশে হ্যান্ড স্যানিটাইজার থাকতে হবে।
সামাজিক দূরত্ব মেনে যাত্রীকে চেক-ইনের লাইনে দাঁড়াতে হবে। প্রতি ফ্লাইটের আগে ডিসইনফেকট্যান্ট ছিটিয়ে ফ্লাইট জীবাণুমুক্ত করতে হবে। এরপর যাত্রীকে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিতে হবে। দেড় ঘণ্টার নিচে কোনো ফ্লাইটে পানি ছাড়া খাবার দেওয়া যাবে না। তবে ডায়াবেটিসের রোগীদের সীমিত আকারে ইনটেক পানি ও জুস দেওয়া হবে। এ নির্দেশনা কার্যকর হলে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটে যাত্রীদের হালকা খাবার পরিবেশন বন্ধ হয়ে যাবে।
এ ছাড়া ফ্লাইটে কেবিন ক্রুদের এন-৯৫ মাস্ক, চশমা, রাবারের হ্যান্ড গ্লাভস ও ফেসিয়াল মাস্ক পরতে হবে। হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক প্রতি চার ঘণ্টায় বদলাতে হবে। তাদের ককপিটে প্রবেশ যত সম্ভব কমিয়ে ইন্টারকমে যোগাযোগ করতে হবে। ফ্লাইটে দুজন কেবিন ক্রু একসঙ্গে খাবার পরিবেশন করতে পারবেন না। ফ্লাইটের দুই সারিতে আসন খালি রাখতে হবে। ফ্লাইটে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে রোগী পাওয়া গেলে তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ওই সব আসনে কেবিন ক্রুরা বসাবেন। সবশেষে ক্রু ও পাইলটদের মানসিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে।
বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী বহন করে থাকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ তিনটি বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস–বাংলা, নভোএয়ার ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ।