সেতুর অভাবে এত বছর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বড় কোনো শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি। জীবন-জীবিকার তাগিদে ঢাকামুখী স্রোত ছিল সেখানকার মানুষের। পর্যটন খাতও বেশ পিছিয়ে আছে। পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ উপকূলের কৃষি, পর্যটন ও শিল্প বিকাশের অবারিত সম্ভাবনা দেখছেন এ অঞ্চলের মানুষ। যোগাযোগের ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় সুফল মিলবে সামগ্রিক অর্থনীতি ও মানুষের জীবনযাত্রায়।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে উত্তরের বিভাগ রাজশাহী ও রংপুরের চেয়ে পিছিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের খুলনা ও বরিশাল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক শুমারি অনুযায়ী, ওই বছর দেশে মোট অর্থনৈতিক স্থাপনা ছিল ৭৮ লাখের কিছু বেশি। এর মধ্যে তখনকার সাতটি বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে কম স্থাপনা ছিল সিলেট, বরিশাল ও খুলনায়। যেমন রংপুরে অর্থনৈতিক স্থাপনার সংখ্যা ছিল ১০ লাখের বেশি। বরিশালে তা ছিল সাড়ে ৩ লাখের মতো। একসময়ের শিল্পসমৃদ্ধ খুলনাও রংপুরের চেয়ে পিছিয়ে।
যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না থাকায় বরিশালে কয়েকটি ওষুধ, সিমেন্ট, টেক্সটাইল কারখানার বাইরে বড় কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান নেই। ১৩৩ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল বিসিক নগরীর বেশির ভাগ প্লট এখনো খালি পড়ে আছে।
বিভাগের ১০ জেলার বিনিয়োগও তুলনামূলক কম। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) খুলনা কার্যালয়ে তথ্য থেকে জানা যায়, খুলনা ও এর আশপাশের জেলায় রপ্তানিমুখী বড় শিল্পকারখানা নেই। এসব জেলায় অটো ব্রিকস, অরগানিক ফার্টিলাইজার, প্লাস্টিক কারখানা, জুট মিল, ফিড মিল ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা রয়েছে। এর বাইরে মোংলা বন্দরকেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে কিছু এলপিজি গ্যাস কারখানা।
বিডার কর্মকর্তারা বলছেন, খুলনা অঞ্চলে বিনিয়োগ প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। ছোট ছোট যেসব কারখানা চালু আছে, সেগুলোর অধিকাংশই যশোর ও কুষ্টিয়াভিত্তিক।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকেরাও পদ্মা সেতুর অপেক্ষায়। তাঁরা সেতু চালু হলে সহজে শস্য, সবজি ও মাছ ঢাকায় পাঠাতে পারবেন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ২০২০ সালের মে মাসে একটি সমীক্ষা করেছিল। এতে মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৭৫০ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, যাঁদের ৯৫ শতাংশ বলেছেন, পদ্মা সেতু চালু হলে কৃষিপণ্যের পরিবহন সহজ হবে।
পদ্মা সেতু ঘিরে তৈরি হয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। ঢাকা থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায় যেতে সময় সাশ্রয় হবে। কুয়াকাটা, তালতলীর টেংরাগিরি, শুভসন্ধ্যা, বরগুনা, পাথরঘাটাসহ আশপাশের এলাকা, এমনকি সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটনশিল্প বিকশিত হবে।
লৌহজংয়ে জেগে ওঠা চরে এরই মধ্যে একাধিক পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। মাওয়া-জাজিরার অনেকেই পেশা বদলে পর্যটন ব্যবসায় ঝুঁকছেন। পায়রা বন্দরের সঙ্গে মোংলা বন্দর, ঢাকা ও সারা দেশের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে উঠবে।