প্রেম করে বিয়ে। তারপর স্ত্রীর গর্ভে সন্তান। সেই স্ত্রী-সন্তানকে অস্বীকার করায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ঘটনার ১৯ বছরে এসে তাঁদের স্বীকৃতি দিতে রাজি। এরপর আদালতের নির্দেশে কারাগারের ভেতরে দুজনের বিয়ে হয়েছে। বিয়ের আসরে হাজির ছিলেন তাঁদের ১৮ বছর বয়সী সন্তানও।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে গত বুধবার এই বিয়ে হয়েছে। বর ইসলাম মৃধা (৪০) ঝিনাইদহ সদরের লক্ষ্মীপুর গ্রামের আজিজ মৃধার ছেলে। কনে মালা খাতুন (৩৫) একই গ্রামের আবুল কাশেমের মেয়ে। তাঁদের বিয়ের কাবিন ঢাকায় সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়েছে। এরপর জামিন মিলেছে ইসলামের। তবে আদেশের কপি কারাগারে পৌঁছায়নি। তাই এখনো মুক্তি মেলেনি।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, একই গ্রামের বাসিন্দা ইসলাম ও মালার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০০০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় এক মৌলভির মাধ্যমে তাঁদের বিয়েও হয়। পরবর্তী সময়ে মালা গর্ভবতী হন। ২০০১ সালের ২১ জানুয়ারির মালার গর্ভে জন্ম নেয় ছেলেসন্তান। তার নাম রাখা হয় মো. মিলন। কিন্তু মালার সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন ইসলাম। ছেলের পিতৃত্বের পরিচয় দিতেও অস্বীকৃতি জানান। এ অবস্থায় মালার পরিবার ধর্ষণের মামলা করে। ঝিনাইদহ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ইসলামের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে ইসলাম হাইকোর্টে আপিল করেন। রায় বহাল থাকে। এরপর আপিল আবেদন করা হয় সুপ্রিম কোর্টে। তাতেও রায় পাল্টায়নি। পরবর্তী সময়ে রিভিউ আবেদন করেন ইসলাম।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত সদস্যের বেঞ্চে রিভিউয়ের শুনানি হয়। এতে ইসলামের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন রুহুল কুদ্দুস। তিনি মালা ও মিলনের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি বিচারকদের সামনে আনেন। আদালতকে বলেন, মালা ইসলামেরই স্ত্রী। আর মিলন যে ইসলামের সন্তান, সেটা ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনেও প্রমাণিত। আদালত তখন শর্ত দেন, মালাকে স্ত্রীর মর্যাদা, মিলনকে সন্তানের স্বীকৃতি দিলেই ইসলাম জামিন পাবেন। আদালতের শর্তে ইসলাম রাজি হন।
আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমে গত বুধবার যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ইসলাম ও মালার পুনরায় বিয়ে হয়। বিয়েতে উপস্থিত হন এই দম্পতির ছেলে মিলনসহ দুই পক্ষের স্বজনেরা। পরে বিয়ের কাবিন সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হয়। কাবিন পাওয়ার পর আদালত গত বৃহস্পতিবার ইসলামের জামিন মঞ্জুর করেন।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ আবু তালেব বলেন, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ইসলামের জামিন আদেশের কপি এখনো কারাগারে পৌঁছায়নি। আদেশের চিঠি পেলেই তাঁর মুক্তির ব্যবস্থা করা হবে।
ইসলাম শুরুতে ১০ বছর ঝিনাইদহের কারাগারে ছিলেন। আট বছর ধরে রয়েছেন যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে। তাঁর মুক্তির অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন ছেলে মিলন। তিনি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। বর্তমানে ঢাকার একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন।
এত বছর পর বাবার স্বীকৃতি পাওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে মিলন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবার স্বীকৃতি না পেলেও এত দিন তাঁর পরিচয়েই বড় হয়েছি। তারপরও অনেক কষ্টে ছিলাম। এখন বাবা মুক্তি পাবেন। আমরা একসঙ্গে থাকতে পারব। এসব ভেবে অনেক আনন্দ পাচ্ছি। বাকি জীবনটা মা-বাবা মিলেমিশে থাকবেন, এটাই আমার একমাত্র চাওয়া।’