নির্বাচনের প্রচারকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার দেশের ১৭ জেলায় হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১৩১ জন নেতা–কর্মী আহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে অধিকাংশ জেলায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একতরফা হামলার অভিযোগ করেছে বিএনপি। আর দুই জেলায় হামলা ও ভাঙচুর নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা।
রাজধানীতে বিএনপির প্রার্থী আফরোজা আব্বাসের প্রচারণায়ও হামলার ঘটনা ঘটেছে গতকাল। এর আগের দিন মঙ্গলবার ১৮ জেলায় ছোট–বড় হামলার ঘটনা ঘটে, নিহত হন দুজন।
রাজশাহীতে হামলা ও পাল্টা হামলা
রাজশাহী-৫ আসনের চারঘাট উপজেলায় মঙ্গলবার বিকেলে ও রাতে পাল্টাপাল্টি হামলায় ৯ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৫ জন নৌকার সমর্থক ও ৪ জন ধানের শীষের সমর্থক। গুরুতর আহত অবস্থায় নৌকার ৪ সমর্থককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় চারঘাট থানায় মামলা হয়েছে। ধানের শীষের তিন সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার লাগাতে গিয়ে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটছে।
বাগেরহাটে বিএনপির তিনজন আহত
বাগেরহাট–৪ আসনের মোরেলগঞ্জে গণসংযোগকালে ২০–দলীয় জোটের প্রার্থী জামায়াতের নেতা মো. আবদুল আলীমের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে মোরেলগঞ্জ সদর বাজারের কাপুড়িয়াপট্টি এলাকায় এ হামলায় প্রার্থী অক্ষত থাকলেও তাঁর তিন কর্মী-সমর্থক আহত হন।
ফরিদপুরে বিএনপির ১৫ কার্যালয় ভাঙচুর
ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে বিএনপির প্রার্থী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের অন্তত ১৫টি নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। গত মঙ্গলবার রাতে শহরের বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লায় এসব কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। দুটি মাইক্রোবাস ও ২৫টির মতো মোটরসাইকেলে মুখোশ ও হেলমেট পরে হামলাকারীরা ভাঙচুরে অংশ নেয়। তবে কোতোয়ালি থানার ওসি এ এফ এম নাসিম জানান, ভাঙচুরের কোনো খবর তাঁর জানা নেই।
নারায়ণগঞ্জে বিএনপির ১০ জন আহত
গতকাল বুধবার দুপুরে এবং মঙ্গলবার রাতে রূপগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নে হামলায় বিএনপির ১০ নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আবু মাসুম বলেন, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে দলীয় প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামান মনিরের পোস্টার লাগানোর সময় যুবলীগ-ছাত্রলীগের লোকজন তাঁদের মারধর করে। ওই হামলায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। পাঁচজনের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ জানান, ‘বিষয়টি শুনেছি। তবে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।’
নাটোরে হামলার অভিযোগ বিএনপির
নাটোর-৩–এর নির্বাচনী এলাকা বড়াইগ্রামের বনপাড়ায় ধানের শীষের কর্মী সম্মেলনে যাওয়ার পথে ছাত্রলীগের ও যুবলীগের হামলায় দুজন আহত হয়েছেন। গতকাল সকালে সিংড়ার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর পৃথক ৬টি লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মজিবুর রহমান।
গাজীপুরে আহত ৫০
গাজীপুর-১ আসনে কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর বাজার এলাকায় গতকাল সকালে বিএনপির প্রার্থীসহ নেতা–কর্মীরা গণসংযোগের সময় হামলা হয়। আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের হামলায় বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতা–কর্মী আহত হন। এ ঘটনা নিয়ে গতকাল দুপুরে বিএনপির প্রার্থী চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী এবং বিকেলে কালিয়াকৈর পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আবদুল ওহাব পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেন।
তানভীর আহমেদ অভিযোগ করেন, নৌকার মিছিল নিয়ে এসে হামলা চালানো হয়েছে। তবে কালিয়াকৈর পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আবদুল ওহাব মিয়া বলেন, বিএনপির লোকজন তাঁদের পার্টি অফিসের সামনে গাড়ি ভাঙচুর করে।
নওগাঁয় ভাঙচুরের অভিযোগ
নওগাঁর রানীনগরে বিএনপির নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার রাতে উপজেলার বগারবাড়ী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। তবে রানীনগর থানার ওসি এ এস এম সিদ্দিকুর রহমান জানান, কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।
নোয়াখালীতে খোকনের পথসভায় হামলা
নোয়াখালী-১ (চাটখিল ও সোনাইমুড়ী একাংশ) আসনে বিএনপির প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের নির্বাচনী পথসভায় হামলা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় সোনাইমুড়ীর জয়াগ বাজারে এ হামলার সময় মাহবুবের এবং চাটখিল উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেনের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। হামলায় মাহবুবের গাড়িচালক আবুল কাশেমসহ ১০ জন আহত হন।
এ ছাড়া মঙ্গলবার রাতে নোয়াখালী–৬ নির্বাচনী আসনের দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার খবিরমিয়ার বাজারে আওয়ামী লীগ-বিএনপির কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও দোকানপাটে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের জের ধরে আওয়ামী লীগের দুই কর্মীকে কুপিয়ে এবং বিএনপির তিন কর্মীকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে।
আমীর খসরুর গণসংযোগে বাধা
গণসংযোগ করার সময় গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে বাধা দিয়েছেন ছাত্রলীগের কিছু কর্মী–সমর্থক। এ সময় বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়।
চাঁদপুরে আহত বিএনপির প্রার্থী
চাঁদপুর-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের নির্বাচনী প্রচারণার গাড়িবহরে হামলায় প্রার্থীসহ অন্তত ৫ জন নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা ৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে।
শেরপুরে ১৪৪ ধারা
শেরপুর-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. মাহমুদুল হকের নির্বাচনী সভা তৃতীয়বারের মতো পণ্ড হয়েছে। শ্রীবরদীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেঁজুতি ধর বলেন, দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
মাগুরায় বিএনপির কার্যালয়ে হামলা
মাগুরার মহম্মদপুরের বনগ্রামে বিএনপির অফিসে হামলা হয়েছে। মাগুরা-২ আসনের বিএনপির প্রার্থী নিতাই রায় চৌধুরী জানান, আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কর্মীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। তবে রবিউল ইসলাম বলেন, এটা মিথ্যা, কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।
অন্যান্য জেলায় হামলা
নেত্রকোনার আটপাড়ায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মিছিলে হাতবোমা বিস্ফোরণে অন্তত ১০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। ঢাকা-১ আসনের দোহারে বিএনপির প্রার্থী খোন্দকার আবু আশফাকের নির্বাচনী প্রচারণায় পুলিশের হামলায় অন্তত ২৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। সাতক্ষীরা-৩ আসনের কালীগঞ্জের নলতা বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির প্রার্থী শহিদুল আলম। সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী আবদুল মান্নান তালুকদারের পথসভা প্রতিপক্ষের বাধার কারণে পণ্ড হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে পুলিশের হামলায় বিএনপির প্রার্থীর পথসভা পণ্ড হয়েছে।