মধুটিলা ইকোপার্ক

১৬ বছরেও পূর্ণতা পায়নি

লোকবল-সংকট, সংস্কারের অভাব ও অব্যবস্থাপনার কারণে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে অবস্থিত সম্ভাবনাময় মধুটিলা ইকোপার্কটি দিন দিন আকর্ষণ হারাচ্ছে। পার্কটি নির্মাণের ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পূর্ণতা পায়নি।
এলাকাবাসী ও বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে ময়মনসিংহ বন বিভাগের আওতায় ভারত সীমানার কোল ঘেঁষে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ৩৮৩ একর জায়গায় ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে মধুটিলা পার্কটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের আরও কিছু কাজ করা হয়। এসব কাজের মাধ্যমে তৃতীয় পর্যায়ে এর পূর্ণাঙ্গ রূপ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তৃতীয় পর্যায়ের কাজ না হওয়ায় পূর্ণতা পাওয়ার পরিবর্তে নানা প্রতিবন্ধকতায় পার্কটি দিনে দিনে ধ্বংস হচ্ছে।
ইকোপার্ক এলাকার বাসিন্দা আসাদুজ্জামান বলেন, প্রতিবছর এই পার্ক থেকে সরকার কয়েক লাখ টাকা রাজস্ব আয় করলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের চরম উদাসীনতার কারণে পার্কটি পূর্ণতা পাচ্ছে না। ফলে দিন দিন দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণ হারাচ্ছে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে পার্কটি ২৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকা, ওয়াচ টাওয়ার ৪ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। টাওয়ারের সঙ্গে প্যাডেল বোট ও ও শিশুপার্ক রয়েছে।
সম্প্রতি পার্কটি ঘুরে ও স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাতি, কুমির, বাঘ, হরিণ, সিংহ, মৎস্যকুমারী, সাপ, ব্যাঙসহ নানা ভাস্কর্যের রং উঠে গেছে। অযত্নে পড়ে আছে সাইটভিট টাওয়ার, লেক, প্যাডেল বোট, স্টার ব্রিজ, মিনি চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক, রেস্টহাউসসহ বিভিন্ন স্থাপনা। লেকের পাড়ে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে ছয়টি প্যাডেল বোট। মিনি চিড়িয়াখানায় ছয়টি হরিণ রয়েছে। চিড়িয়াখানার নিরাপত্তার কাঠের বেষ্টনী দুর্বল, বেড়া ভেঙে যেকোনো সময় হরিণ চলে যেতে পারে। শিশুপার্কের চারপাশে সীমানাপ্রাচীর থাকলেও ভেতরে নেই বিনোদনের কোনো স্থাপনা। ইজারাদার নিজ উদ্যোগে রেলগাড়ি ও নাগরদোলা নামে দুটি রাইড স্থাপন করেছেন। পার্কের ভেতরে নেই পর্যাপ্ত পানি ও টয়লেটের ব্যবস্থা।
ইজারাদার ফরিদ আহম্মেদ বলেন, পার্শ্ববর্তী গজনী অবকাশে অনেক স্থাপনা ১০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। ইজারাদারেরা ব্যবসার কথা ভেবে নিজের উদ্যোগে বিভিন্ন আকর্ষণীয় রাইডসহ প্রচারণার ব্যবস্থা করে থাকেন। কিন্তু এই ইকোপার্কের চিত্র উল্টো। সংশ্লিষ্ট বিভাগ পার্কটির প্রতি নজর দিলে গারো পাহাড়ে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হবে এটি।
মধুটিলার রেঞ্জার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পার্কের চারপাশে বেশির ভাগ অংশে সীমানাপ্রাচীর নেই। জনবল সংকটের কারণে দায়িত্ব পালনে প্রতিনিয়ত তাঁদের হিমশিম খেতে হয়। পার্কের উন্নয়নে তৃতীয় পর্যায়ের কাজের প্রস্তাবসহ সব সমস্যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রধান বন কর্মকর্তা (ডিএফও) গবিন্দ রায় বলেন, পার্কে সীমানাপ্রাচীরের একাংশ সম্প্রতি হাতি ভেঙে ফেলেছে। বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্পের আবেদন করা হয়েছে। এ বছরের জুলাই থেকে পার্কের উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হবে। এর ফলে দ্রুত পার্কটি পূর্ণতা পাবে।