বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় এবার শীর্ষ অবস্থানে আছে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ নরওয়ে। প্রতিবেশী দেশ ডেনমার্ককে পেছনে ফেলে এবার তালিকার এক নম্বরে উঠে গেল দেশটি। আর ১৫৫টি দেশের মধ্যে সুখী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ১১০তম। বাংলাদেশের উন্নতি নেই, অবনতিও নেই।
গতকাল সোমবার জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) থেকে ‘বিশ্ব সুখ দিবস’ উপলক্ষে ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০১৭’ প্রকাশিত হয়। ২০১২ সাল থেকে জাতিসংঘ এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে।
বিশ্বের সুখী দেশের এই তালিকা তৈরি করতে ছয়টি মানদণ্ডকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। এই ছয় মানদণ্ড হলো মোট দেশজ উৎপাদন, স্বাস্থ্যকর গড় আয়ু, নিজের জীবন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা, উদারতা, সামাজিক সমর্থন এবং দুর্নীতিবিহীন সরকার ও ব্যবসা।
প্রতিবেদন তৈরির সময় দেড় শরও বেশি দেশের এক হাজারের বেশি মানুষকে একটি সহজ প্রশ্ন করা হয়। জরিপের অন্তর্ভুক্ত মানুষকে ১০টি ধাপওয়ালা একটি মই কল্পনা করতে বলা হয়। মইয়ের ১০ নম্বর ধাপে যিনি দাঁড়িয়েছেন, তিনি সবচেয়ে সুখী। ১০ নম্বর ধাপের জন্য একটি পয়েন্ট ঠিক করা ছিল। উল্টো দিকে যে যত নিচের ধাপ বেছে নিয়েছেন, তিনি তত অসুখী, তাঁর স্কোরও তত কম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নরওয়ের পরই তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে ডেনমার্ক দ্বিতীয় অবস্থানে, আইসল্যান্ড তৃতীয়, সুইজারল্যান্ড চতুর্থ, ফিনল্যান্ড পঞ্চম, নেদারল্যান্ডস ষষ্ঠ, কানাডা সপ্তম, নিউজিল্যান্ড অষ্টম, অস্ট্রেলিয়া নবম ও সুইডেন দশম অবস্থানে আছে। গত বছর ডেনমার্ক প্রথম অবস্থানে ছিল।
তালিকার একদম শেষে, অর্থাৎ সুখী দেশের দিক থেকে ১৫৫তম অবস্থানে আছে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র। আরও কম সুখী দেশগুলোর মধ্যে আছে সিরিয়া (১৫২তম), দক্ষিণ সুদান (১৪৭তম) ও ইয়েমেন (১৪৬তম)।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান ৮০তম স্থানে থেকে সবচেয়ে সুখী। নেপাল ৯৯, বাংলাদেশ ১১০, মিয়ানমার ১১৪, শ্রীলঙ্কা ১২০ ও ভারত ১২২তম এবং সবচেয়ে অসুখী ১৪১তম স্থানে থাকা আফগানিস্তান।
এবার চার ধাপ এগিয়েছে যুক্তরাজ্য, দেশটির অবস্থান ১৯তম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর যুক্তরাষ্ট্র এই তালিকায় গত বছরের চেয়ে এক ধাপ পিছিয়ে গেছে। এবার যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ১৪। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আয় বেড়েছে, কিন্তু সুখ কমেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নীতিনির্ধারকেরা শুধু মনোযোগ দিয়েছেন আয় বাড়ানোয়, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুঃখের মূল কারণ সামাজিক সংকট। দেশটিতে আয় বিবেচনায় শীর্ষস্থানে থাকা ১ শতাংশ মানুষ মোট আয়ের ২৩ শতাংশ ভোগ করছেন। একই পরিমাণ সম্পদ ভোগ করছেন সবচেয়ে দরিদ্রদের ৭০ শতাংশ মানুষ। আয়বৈষম্য, সরকারের প্রতি আস্থাহীনতা, দুর্নীতি ও একাকিত্ব মার্কিনদের অশান্তির কারণ।
প্রতিবেদনে সুখে থাকার জন্য কাজ থাকা জরুরি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গবেষকেরা দেখেছেন, যাঁদের চাকরির নিরাপত্তা আছে, তাঁরা ভালো থাকেন। সেই সঙ্গে ভালো বস, ভালো সহকর্মী, বৈচিত্র্যময় ভালো কাজ, কাজের স্বাধীনতা থাকলে বাড়তি সুখ পাওয়া যায়। কাজে ঝুঁকি থাকলে বা অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকলে মানুষ কাজ করে সুখ পায় না।
এসডিএসএনের পরিচালক ও জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ উপদেষ্টা জেফ্রে স্যাকস এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যেসব দেশে সমৃদ্ধির মধ্যে ভারসাম্য আছে, অর্থাৎ যেসব দেশে সমাজের চূড়ান্ত পর্যায়ের আস্থা আছে, অসমতা কম ও সরকারের প্রতি জনগণের পূর্ণ আস্থা আছে—সেসব দেশ সাধারণ মাপকাঠিতে সুখী দেশ।’