১৩ কিলোমিটার সংস্কার হয় না পাঁচ বছর

>দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়কগুলো বেহাল হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও নির্মাণের অল্প দিনের মধ্যেই পিচ–খোয়া উঠে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে গর্তের। কোথাও সড়ক ধসে পড়েছে। এসব সড়ক নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন
দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ-লাউড়েরগড় সড়কের পিচ–পাথর উঠে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো
দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ-লাউড়েরগড় সড়কের পিচ–পাথর উঠে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো

সুনামগঞ্জে পর্যটকদের প্রিয় তিনটি স্থান হলো বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ টাঙ্গুয়ার হাওর, লাউড়েরগড় এলাকার যাদুকাটা নদী এবং বারেকটিলার আশপাশের এলাকা। কিন্তু এই তিন স্থানে যাতায়াতের সড়কটির বেহাল দশার কারণে মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ থেকে এই তিন জায়গায় যেতে হলে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ থেকে লাউড়েরগড় হয়ে যেতে হয়। কিন্তু জেলা শহর থেকে পলাশ পর্যন্ত সড়কের অবস্থা ভালো হলেও পলাশ থেকে লাউড়েরগড় পর্যন্ত সড়ক বেহাল। গত পাঁচ বছরে সড়কটির কোনো সংস্কারকাজ হয়নি।

উপজেলা প্রকৌশলীর (এলজিইডি) কার্যালয় ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পলাশ থেকে ধনপুর, মাছিমপুর, চিনাকান্দি বাজার হয়ে লাউড়েরগড় পর্যন্ত সড়কের দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। এই সড়ক দিয়েই জেলা শহর থেকে তাহিরপুর উপজেলার তিনটি শুল্কস্টেশন বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলীতে প্রতিদিন ব্যবসায়ীসহ অনেকে যাতায়াত করেন। টাঙ্গুয়ার হাওর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শাহ আরফিনের (রহ.) আস্তানা ও যাদুকাটা নদীর তীরের অদ্বৈত মহাপ্রভুর তীর্থস্থানে যাতায়াতের সড়কও এটি। একই সঙ্গে উপজেলার ধনপুর ও পলাশ ইউনিয়নের মানুষের উপজেলা সদর ও জেলা শহরে যাতায়াত করতে হয় এই সড়ক দিয়ে। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এখন সড়কের পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে।

গত বুধবার সরেজমিনেদেখা গেছে, সড়কের পলাশ থেকে ধনপুর বাজার পর্যন্ত অংশে ভাঙা ও খানাখন্দ বেশি। পলাশ ইউনিয়নের মাঝাইর, মেরুয়াখলা, সুরেশনগর গ্রামের পাশের অংশের পিচ উঠে পাথর বেরিয়ে এসেছে। কোথাও কোথাও সড়ক দেবে গেছে। গত বন্যায় এ অবস্থা হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। একই অবস্থা মাছিমপুর থেকে লাউড়েরগড় পর্যন্ত। কোথাও কোথাও বালু-পাথর সরে সড়কের প্রস্থ কমে গেছে। আবার কোথাও কালভার্টে ওঠানামার স্থানে গর্ত হয়ে আছে।

মেরুয়াখলা গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আবুল মনসুর বলেন, শুধু এলাকাবাসীই নন, বড়ছড়া-চারাগাঁও শুল্কস্টেশনে যেতে ব্যবসায়ীদের এই সড়ক ব্যবহার করতে হয়। তাহিরপুর উপজেলার একাংশের লোকজনও এই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। সুরেশনগর গ্রামের রাস্তার পাশের দোকানিশামীম আহমদ বলেন, ‘তিন বছর আগে একবার অফিসের লোকজন আইয়া সড়ক মাইফা নিছিল। ভাবছিলাম কাজ অইব। এখন দেখি আর কোনো খবর নাই।’ সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী শাহীন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা শুল্কস্টেশনে যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছি।’

ধনপুর গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক মোশারফ হোসেন জানান, সড়কের বেশির ভাগ স্থানেই কার্পেটিং ও পিচ ঢালাই উঠে বেহাল হয়ে পড়েছে। খুব কষ্ট করে লোকজনকে চলাফেরা করতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন এই সড়কের কোনো কাজ হয়নি।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. সুলেমান তালুকদার বলেন, ‘জেলার তিনটি শুল্কস্টেশনে যাতায়াতের একমাত্র সড়ক এটি। এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি এখন যান চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আমরা সড়কের কাজের জন্য বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বলেছি। শুনেছি, এ বছর কাজ হবে।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহিম আলী গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, পলাশ-লাউড়েরগড় সড়কের পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। প্রায় পাঁচ বছর এই সড়কের কোনো সংস্কারকাজ হয়নি। নতুন করে সড়কের কাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। ঠিকাদার কার্যাদেশ পেলেই কাজ শুরু করবেন।