১৬ হাজার অগ্নিকাণ্ড

১০ বছরে নিহত ১৫৯০ জন

ট্রাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় অগ্নিকাণ্ড, টঙ্গী ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর, নিহত ৪১ জন
ট্রাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় অগ্নিকাণ্ড, টঙ্গী ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর, নিহত ৪১ জন
>

• দেশে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ড ঘটে ঢাকা বিভাগে
• গত ১০ বছরে ঢাকার পাশাপাশি গাজীপুর ও সাভারে ঘটে ছয়টি ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনা
• এসব দুর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত হন
• আহত হন কয়েক শ মানুষ।
• বৈদ্যুতিক ত্রুটি থেকে ঘটে বেশি দুর্ঘটনা

দেশে গত ১০ বছরে ছোট-বড় অন্তত ১৬ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৫৯০ জন। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি
অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে গত বছর। আর হতাহত বেশি হয়েছে ২০১১ সালে। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ২০১০ থেকে ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

নিমতলী অগ্নিকাণ্ড, পুরান ঢাকা ২০১০ সালের ৩ জুন, নিহত ১২৪ জন

ফায়ার সার্ভিস বলছে, গত ১০ বছরে বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১০ সালে, পুরান ঢাকার নিমতলীতে। এতে ১২৪ জন নিহত হন। এর পরের বছর সাভারের আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনসের অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান ১১১ জন। আর ২০১৬ সালে টঙ্গীর টাম্পাকো ফয়েলস কারখানার অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ৪১ জন।

তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন, সাভারের আশুলিয়ায় ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর, নিহত ১১১ জন

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান বলেন, অগ্নিপ্রতিরোধের ব্যবস্থা রাখা বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে হবে। কারণ অগ্নিকাণ্ডে জীবন ও সম্পদের অনেক ক্ষতি হয়। অনেকেই মনে করেন, আগুন লাগলে দেখা যাবে, এ জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেন না। এই মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সব ক্ষেত্রেই নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকতে হবে। যাতে অগ্নিকাণ্ডের সময় অন্তত ১০-১৫ মিনিট প্রতিরোধ করা যায়। আর সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিতে হবে। ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা আরও বাড়ানোর পক্ষেও মত দেন তিনি।

ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১০ সালে সারা দেশে ১৪ হাজার ৬৮২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ২৭১ জন নিহত ও ৭৯৪ জন আহত হন। ২০১১ সালে ১৫ হাজার ৮১৫টি দুর্ঘটনায় ৩৬৫ জন নিহত ও ১ হাজার ৪৭৯ জন আহত হন।

দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার, আশুলিয়া ২০১০ সালের ১৪ ডিসেম্বর, নিহত ২৯ জন

একইভাবে ২০১২ সালে ২১০ জন নিহত ও ৮০৩ জন আহত, ২০১৩ সালে ১৬১ জন নিহত ও ১ হাজার ৪৭১ জন আহত, ২০১৪ সালে ৭০ জন নিহত ও ২৫০ জন আহত, ২০১৫ সালে ৬৮ জন নিহত ও ২৫৪ জন আহত, ২০১৬ সালে ৫২ জন নিহত ও ২৬৭ জন আহত, ২০১৭ সালে ৪৫ জন নিহত ও ২৮৪ জন আহত এবং ২০১৮ সালে ১৩০ জন নিহত ও ৬৭৭ জন আহত হন। এতে ৪ হাজার কোটি টাকার ওপর আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

গরিব অ্যান্ড গরিব গার্মেন্টস, গাজীপুর ২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, নিহত ২১

পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে, দেশের আট বিভাগের মধ্যে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আর সবচেয়ে কম অগ্নিকাণ্ড হয় সিলেট বিভাগে। নতুন গঠিত ময়মনসিংহ বিভাগেও অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা সিলেটের চেয়ে বেশি।

এর কারণ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, অন্য বিভাগীয় শহরের তুলনায় ঢাকার আয়তন, বয়স, ভবন ও মানুষের সংখ্যা, কারখানা—সবই বেশি। তাই ঢাকায় ঝুঁকি ও দুর্ঘটনার হার বেশি।

গাজীপুরের ম্যালটিফ্যাবস বয়লার বিস্ফোরণ ২০১৭ সালের ৩ জুলাই, নিহত ১৩ জন

অগ্নিকাণ্ডের পর সূত্রপাত সম্পর্কেও তদন্ত করে ফায়ার সার্ভিস। এসব তদন্তে দেখা গেছে, বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণেই বেশি অগ্নিকাণ্ড ঘটে।

২০১৮ সালের ১৯ হাজার ৬৪২টি অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে ৭ হাজার ৮২৫টি অগ্নিকাণ্ডই ঘটেছে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে। চুলার আগুন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে ৩ হাজার ৪৪৯টি, আর সিগারেটের আগুন থেকে ৩ হাজার ১০৮টি।