ভোলা-৩ (লালমোহন ও তজুমুদ্দিন) আসনে বিএনপির প্রার্থী হাফিজ উদ্দিন আহমদ ১০ দিন পরে গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় প্রচারে বের হয়েও বাধার মুখে পড়েছেন। তাঁর অভিযোগ, আওয়ামী লীগের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী তাঁকে এক ঘণ্টা আটকে রাখেন। পরে পুলিশ ও বিজিবি তাঁকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে।
বিকেলে বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে হাফিজ উদ্দিন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টার সময় প্রচারে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলাম। নিজে একা একা, গাড়ি নিয়ে। সঙ্গে চারজন পুলিশ ছিল। লালমোহন উপজেলার সামনে রাস্তার মধ্যে (ভোলা-চরফ্যাশন সড়ক) যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও মহিলা লীগের ২-৩ হাজার সমর্থক অস্ত্রসহ আমাকে চারপাশ দিয়ে আটকে ফেলে। আমি ইউএনওকে বললাম, নৌবাহিনীকে আসতে বলার জন্য। তারাও আসেনি। আমি রাস্তার ওপর গাড়িতে এক ঘণ্টা বসেছিলাম। যখন দেখলাম, পুলিশ অপারগতা প্রকাশ করছে, রাস্তা পরিষ্কার করতে পারবে না। আমাকে প্রচারণা করতে দেবে না, তখন ফিরে আসছি। সবাই “দেখছি” বলেই ক্ষান্ত। আমি ১০ দিন অবরুদ্ধ, কত দিন ঘরের ভেতর বন্দী থাকা যায়!’
অভিযোগের বিষয়ে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন) গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ১০ বছর পর এলাকায় এসেই বিএনপির প্রার্থী হাফিজ উদ্দিন আহমদ সংঘাতে লিপ্ত হয়েছেন। বিগত ২৩ বছর লালমোহন-তজুমদ্দিনকে সন্ত্রাসের জনপদ করে রেখেছিলেন। মানুষ তাঁর নির্যাতনের শিকার হয়ে আজ জেগে উঠেছে। তাঁকে প্রত্যাখ্যান করছে। আতঙ্ক হিসেবে জেনেই মানুষ তাঁকে প্রচার চালাতে গ্রামে যেতে দিচ্ছে না।
লালমোহন থানার ওসি মীর খায়রুল কবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা কি এখন লাঠিচার্জ করব? আমরা প্রার্থীকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি।’
ভোলার জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, ‘মেজর হাফিজ উদ্দিন যখন আমাকে বললেন, আমি ইউএনওকে বলে দিয়েছি, ইউএনও বিজিবির ব্যবস্থা করেছে, তারপর উনি বের হয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘এখন হাজার লোক তাঁকে (হাফিজ উদ্দিন) ঘিরে ধরছে, তাদের তো আর সরানো যাবে না, মারতে যাবে না। যদি আক্রমণমুখী না হয়।’
অপরদিকে ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখান) আসনে বিএনপির প্রার্থী হাফিজ ইব্রাহিম অভিযোগ করেছেন, ১০ দিন ধরে তিনি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। তাঁর বাড়িতে বাজার নেই। ওষুধ নেই। তাঁকে প্রতি বেলায় ওষুধ খেতে হয়।
হাফিজ ইব্রাহিম বলেন, তাঁর বাড়িতে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। কেউ প্রবেশ করলে বের হতে পারছে না। তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে বারবার অনুরোধ করেও নিরাপত্তা পাননি।
হাফিজ ইব্রাহিমপুর অভিযোগের বিষয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, ‘ইউএনও একজন পুলিশ ঠিক করে দিয়েছে তার বাসায় বাজার নেওয়ার জন্য। বলেছি, আপনি বাজারের লোক পাঠান, বাজার নিচ্ছে, বাজার না নিলে এত দিন ধরে তারা কীভাবে আছেন! খাওয়া কীভাবে চলছে! এ অভিযোগ আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে, আমি তাঁদের ফোন ধরি, তাঁদের অভিযোগগুলো শুনি। ব্যবস্থাও নিচ্ছি।’