সাভার বিপর্যয়ে গুরুতর আহত ১০ জনের চিকিৎসার জন্য সিআরপিকে (সেন্টার ফর রিহ্যাবিলিটেশন অব প্যারালাইজড) আরও ১৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে। মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিলের পক্ষ থেকে গত মঙ্গলবার সিআরপিতে গিয়ে কর্তৃপক্ষ ও আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে ১০ জন রোগীর চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করা হয়।মেরুরজ্জুতে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের কাজে এ টাকা ব্যয় করা হবে। এ চিকিৎসায় কারও তিন মাস, কারও ছয় মাস, কারও আট মাস সময় লাগবে। চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য এ অর্থ ব্যয় হবে।গুরুতর আহত এই ১০ জন নারী ও পুরুষ শ্রমিকের মধ্যে চারজন মেরুরজ্জুতে আঘাতপ্রাপ্ত। স্পাইন ভেঙেছে একজনের। আর পাঁচজনের পক্ষাঘাতের সমস্যা।
আহতদের নাম-পরিচয়
২২ বছরের তারেকুল ইসলাম ডান নিতম্বের হাড়ে (হিপ জয়েন্ট) ব্যথা পেয়েছেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি রাজশাহী জেলার মোহনপুর থানার হুটরা গ্রামে। এইচএসসি পাস করে ঢাকায় এসেছিলেন চাকরির সন্ধানে। কোনো কাজ না পেয়ে তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন এবং বিএ শ্রেণীতে পড়াশোনা করছেন।খালেদ রেজার বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার ঘোনাপাড়া গ্রামে। তিনি নিউ ওয়েভস্টাইল গার্মেন্টসের সপ্তম তলায় চাকরি করতেন। তাঁর ডান হাত ও ডান পায়ের ওপরের অংশ ভেঙেছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁকে আরও এক মাস হাসপাতালে থাকতে হবে।জাকির হোসেন মৃধার বাড়ি ঝালকাঠি জেলার পুরাবালিয়া দাওরি গ্রামে। তাঁর দুই পা-ই পক্ষাঘাতগ্রস্ত, মেরুদণ্ডে কোমরের অংশ ভেঙেছে। আঙুল নাড়াতে পারেন না। এনাম মেডিকেল ও কিডনি হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে তিনি সিআরপিতে এসেছেন।রেজাউল করিম নিউওয়ে গার্মেন্টসের অষ্টম তলায় কাজ করতেন। ভবনধসের দুই দিন পর উদ্ধারকর্মীরা তাঁকে বের করেন। রেজাউলের মেরুদণ্ডের পিঠের দিকে ভেঙেছে। পায়ের আঙুল নাড়াতে পারেন না। পাবনা জেলার বেড়া থানার ধুপসালেডাঙ্গা গ্রামে তাঁর বাড়ি।বেলির অসুস্থ স্বামী রুস্তম আলী রিকশা চালাতে পারেন না। তাঁদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। সংসার চালাতে তাই স্ত্রী বেলি পোশাক কারখানায় কাজ নেন। গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর থানার দক্ষিণ হাটপাশায় তাঁর বাড়ি। আঘাতে তাঁর দুই পা পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও মেরুদণ্ডের কোমরের অংশ ভেঙে গেছে। অস্ত্রোপচার হয়েছে এক দফা। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁকে আরও চার মাস হাসপাতালে থাকতে হবে।
সুফিয়ার বাড়ি দিনাজপুরের পার্বতীপুর থানার দুর্গাপুর গ্রামে। অষ্টম তলায় সুইং অপারেটর পদে কাজ করতেন তিনি। আঘাতের কারণে তাঁর দুই পা পক্ষাঘাতগ্রস্ত এবং মেরুদণ্ডের কোমরের অংশ ভাঙা। কোমরে ব্যথা। অস্ত্রোপচার হয়েছে এক দফা। তাঁকে আরও এক মাস হাসপাতালে থাকতে হবে।
পারভিন চাকরি করতেন ফ্যান্টম গার্মেন্টসে হেলপার পদে। বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর থানার মরহাদ গ্রামে। ভবনধসে আঘাতের কারণে তাঁর কোমরের নিচের অংশে ব্যথা ও ফোলা। তাঁর স্বামী হারুন। তাঁদের চার সন্তান।
সিআরপি হাসপাতালে মেঝেতে শুয়ে আছেন রিতা (সাভারে ভবনধসের পর অতিরিক্ত রোগী হওয়ায় অনেককে মেঝেতে বিছানা দেওয়া হয়)। কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার গোপালপুর গ্রামে তাঁর বাড়ি। তাঁর কাছে এখন আপন বলতে কেউ নেই। কারণ মা-বোনকে এখনো দুর্ঘটনার খবর দেননি। তাঁরা নিজেরাই নানা সমস্যায় আছেন। স্বামী থেকেও নেই। স্বামী সুযোগসন্ধানী। কেউ টাকা-পয়সা দিলে জোর করে কেড়ে নিয়ে যান। আঘাতের কারণে তাঁর ঘাড় ও পিঠে ব্যথা ও ফোলা। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁকে আরও ১৫ দিন হাসপাতালে থাকতে হবে।
জুয়েল সরকার বগুড়ার সোনাতলা থানার আগুরিয়া তায়ের গ্রামের বাসিন্দা। ভবনধসের মাত্র ১৮ দিন আগে নিউওয়ে গার্মেন্টসে যোগ দেন। দুর্ঘটনায় আঘাতের পর পিঠে ও ঘাড়ে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। এনাম মেডিকেলে চিকিৎসা শেষে ২৬ মে সিআরপিতে ভর্তি হন।
টেট্টাস গার্মেন্টস কর্মকর্তাদের চা খাওয়াতেন মরিয়ম। রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার বজরত তাজপুর কামারখুশা গ্রামে তাঁর বাড়ি। মরিয়মের আয়ে সংসার চলত। ভবনধসের ঘটনায় তাঁর আঘাতজনিত পক্ষাঘাত। দুই পা ও মেরুদণ্ডের কোমরের অংশ ভাঙা, দুই পা অবশ। মেয়ে নূপুর মায়ের সেবা করছেন। পঙ্গু হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসা শেষে ২৬ মে সিআরপিতে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁকে আরও ছয় মাস হাসপাতালে থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে আহত ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য ২০টি হুইলচেয়ার বাবদ ও চিকিৎসা-সহায়তার জন্য সিআরপিকে আরও সাত লাখ ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল।