১ জুলাই ২০১৬, শুক্রবার। রাত পৌনে নয়টা। অতর্কিত হামলা, গুলি
গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হোলি আর্টিজান বেকারিতে কয়েকজন যুবক অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তারা গুলিও ছোড়ে। তখন সেখানে পুলিশ গেলে তাদের সঙ্গে গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। শুরুতেই গুলিতে প্রদীপ ও আলমগীর নামের পুলিশের দুজন কনস্টেবল ও আবদুর রাজ্জাক নামের এক পথচারী আহত হন। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ওই এলাকা ঘেরাও করে ফেলে।
১ জুলাই ২০১৬, শুক্রবার। রাত ১০টা। গুলি-বোমায় আহত পুলিশ
হোলি আর্টিজান বেকারির ভেতর থেকে একের পর এক গুলি ও বোমার আওয়াজ ভেসে আসতে থাকে। রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে ভেতর থেকে অস্ত্রধারীরা পরপর দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় এবং বেশ কয়েকটি গুলি ছোড়ে। এ সময় চারদিকে ঘিরে থাকা র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দৌড়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যান। বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিনসহ আহত কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
১ জুলাই ২০১৬, শুক্রবার। রাত ১১টা। আইএসের দায় স্বীকার
গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী উল্লেখ করে শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টায় পাঁচ তরুণের ছবি প্রকাশ করে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। জঙ্গিগোষ্ঠীর ইন্টারনেটভিত্তিক তৎপরতা নজরদারিতে যুক্ত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ এ তথ্য জানায়।
১ জুলাই ২০১৬, শুক্রবার। রাত সাড়ে ১১টা। জঙ্গিদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা
ঘটনাস্থলে আসেন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। তিনি সাংবাদিকদের জানান, হোলি আর্টিজানের ভেতরে অন্তত ২০ জন বিদেশিসহ কয়েকজন বাংলাদেশিও আটকা পড়েছে। ভেতরে যাঁরা আছেন, তাঁদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য তাঁরা বিপথগামীদের সঙ্গে কথা বলতে চান। সেই সঙ্গে অভিযানের ঘটনা সরাসরি সম্প্রচার না করার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
১ জুলাই ২০১৬, শুক্রবার। দিবাগত রাত ১২টা। অভিযানে কমান্ডোরা
পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনা করে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির পাশাপাশি রাতেই সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর কমান্ডোরা অভিযানে অংশ নেন। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সম্মিলিতভাবে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। নিরাপত্তার স্বার্থে ঘটনাস্থলের পাশ থেকে গণমাধ্যমকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে দেওয়া হয়।
১ জুলাই শুক্রবার, ২০১৬। দিবাগত রাত দেড়টা। হত্যাযজ্ঞের খবর
হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় শুক্রবার রাতেই ২০ জনকে হত্যা করা হয়। নিহত ২০ জনের মধ্যে নয়জন ইতালির নাগরিক, সাতজন জাপানের ও একজন ভারতের নাগরিক। বাকি তিনজন বাংলাদেশি। তাঁরা হলেন ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ আইয়াজ হোসেন, ঢাকার ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান ক্রিয়েটিভসের সাবেক পরিচালক ইশরাত আখন্দ এবং ল্যাভেন্ডার গ্রুপের মালিক মনজুর মোরশেদের নাতনি অবিন্তা কবীর।
২ জুলাই ২০১৬, শনিবার। সকাল ৭টা ৪০ মিনিট। অভিযানের শুরু ও শেষ
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এয়ার কমান্ডোর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযান শুরু হয়। ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মধ্যেই সব সন্ত্রাসীকে নির্মূল করে ওই এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। অভিযানের মাধ্যমে একজন জাপানি, দুজন শ্রীলঙ্কানসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। ছয়জন হামলাকারী ঘটনাস্থলেই নিহত হয় এবং এক সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১২ ঘণ্টার এই জিম্মি ঘটনায় ২০ জিম্মি, ছয় সন্ত্রাসী, দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২৮ জন নিহত হন। আহত হন অন্তত ২০ জন পুলিশ সদস্য।
২ জুলাই শনিবার, রাত পৌনে ৮টা। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
রেডিও ও টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাষণে হোলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। ৩ জুলাই রোববার ও ৪ জুলাই সোমবার রাষ্ট্রীয় শোকের দিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও জনগণকে কালো ব্যাজ ধারণ করতে বলা হয়। এ ছাড়া মসজিদে মোনাজাত এবং মন্দির, গির্জা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে প্রার্থনা করার কথা জানানো হয়। সেই সঙ্গে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করে বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।