হেমন্তের বিকেলে বই নিয়ে উত্সব, লালনের গান

হেমন্তের মিষ্টি রোদ কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার চত্বরে। মূল প্রবেশপথ ধরে যে রাস্তা চলে গেছে শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনের দিকে, এর এক পাশে বইয়ের স্টল। গতকাল বৃহস্পতিবার সেখানে হেমন্তের বইমেলা শুরু হয়েছে। গ্রন্থাগারের দ্বিতীয় এবং নিচতলায় আরও দুটি মেলা। দ্বিতীয় তলায় নজরুল বইমেলা, নিচতলায় নবান্নের বই উত্সব। শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে গানের আসর। এ ছাড়া ছিল নাটক আর রাজধানীর বিভিন্ন গ্যালারিতে চিত্রপ্রদর্শনী। সব মিলিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দারুণ জমজমাট ছিল রাজধানীর সাংস্কৃতিক অঙ্গন। গতকাল বিকেলে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি শাহবাগ শাখা আয়োজন করেছে ‘হেমন্তের বইমেলা ১৪১৬’। বিকেলে এর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের পরিচালক নূর হোসেন তালুকদার। স্বাগত বক্তব্য দেন সমিতির শাহবাগ শাখার সদস্যসচিব খান মাহবুব। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন মেলার আহ্বায়ক আনোয়ার ফরিদী। ফয়সাল আরেফিনের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন খন্দকার সোহেল।এবারের মেলায় ১৬টি পুস্তক প্রকাশনা সংস্থা অংশ নিয়েছে। এগুলো হলো পাঠক সমাবেশ, জাগৃতি, ঘাস ফুল নদী, সন্দেশ, ম্যাগনাম ওপাস, পলল, জনান্তিক, উত্স, মুক্তচিন্তা, মেঘ প্রভৃতি। মেলা প্রতিদিন বেলা দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চলবে।চলছে নবান্নের গ্রন্থ উত্সবকেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের নিচতলায় গত বুধবার বিকেলে শুরু হয়েছে অ্যাডর্ন পাবলিকেশন্সের আয়োজনে নবান্নের বই উত্সব। বিশেষ মূল্যে উত্সবে বই বিক্রি হচ্ছে। উত্সবে শিশু-কিশোরদের উপযোগী গ্রন্থ থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর পাঠকের জন্য নানান বিষয়ের বই কেনা যাবে বিশেষ কমিশনে।লোকগানের আসরকেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত লোকগানের উত্সব শেষ হলো গতকাল। শেষ দিনে সংগীত পরিবেশন করেন কুষ্টিয়া ও সুনামগঞ্জ থেকে আসা বাউলশিল্পীরা। দর্শকদের তাঁরা লালন-হাছনের মরমি, বিচ্ছেদি এবং দেহতত্ত্বের গানে মাতিয়ে রাখেন। লালন সাংস্কৃতিক দল দুই দিনের এই গানের উত্সবের আয়োজন করেছিল।শিল্পকলায় ‘গাজী কালু চম্পাবতী’শিল্পকলা একাডেমীর পরীক্ষণ নাট্য মিলনায়তনে গতকাল মঞ্চস্থ হলো লোককাহিনীভিত্তিক নাটক গাজী কালু চম্পাবতী। পুঁথিকার শেখ খোদা বকশ, হালুমীর এবং আব্দুর রহিমের আখ্যান থেকে এর নাট্যলিপি তৈরি করেছেন সাইমন জাকারিয়া, সাইদুর রহমান ও জুনায়েদ ইউসুফ। নাটকটির নির্দেশক গোলাম সারোয়ার।নতুন নাটক ‘জলযুদ্ধ’প্রায় এক বছর গবেষণা ও অনুশীলন শেষে মঞ্চে এসেছে কারিগরের দ্বিতীয় নাটক, জলযুদ্ধ। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার এই নাটকের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হলো শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালায়।নদী ও জল নিয়ে মিথ, নদীপাড়ের মৃত ও নিঃসঙ্গ মানুষের কাহিনী নিয়ে গড়ে উঠেছে জলযুদ্ধ নাটকের পটভূমি। নাটকটির কাহিনীতে শহীদে কারবালা পুঁথি অবলম্বনে কারবালা যুদ্ধের কাহিনীর সঙ্গে সঙ্গে উঠে এসেছে নদীপাড়ের বিভিন্ন সভ্যতা গড়ে ওঠার ইতিহাস। চর দখলের কাহিনী, সেই সঙ্গে নদীতে বাঁধ নির্মাণের ফলে নিঃস্ব হয়ে পড়া কিছু মানুষের গল্পসহ গোটা পৃথিবীর জলবায়ু পবিবর্তনের ফলে মানুষের অভ্যাসগত ও সামাজিক বিকৃত বিবর্তনের এক নিদারুণ পরিণতির চিত্র।নাটকটির গতি নদীর মতোই। একটি মাত্র কাহিনী নয়, জীবন ও নদীর পাড়ে পাড়ে যেমন প্রতি মুহূর্তেই অনেক ঘটনা ঘটে যায়, ঠিক তেমনি এক ঘণ্টা ৪০ মিনিটের এই নাটকের বাঁকে বাঁকে অনেক ঘটনা ও মুহূর্ত দৃশ্যায়ন করা হয়, যা এখনকার মানুষের জীবনযাপনে প্রকাশিত অথবা অপ্রকাশিত। নদীপাড়ের মানুষের মুখ থেকে ছড়ানো গল্প ব্রহ্মপুত্র ও শীতলক্ষ্যার প্রেমকাহিনীও উপস্থাপন করা হয়েছে নাটকে।নাটকটির নির্মাণশৈলীতে উত্তরবঙ্গের পটালাটিয়ার উপস্থাপনভঙ্গিকে অনুসরণ করা হয়েছে।নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন সরকার হায়দার। অভিনয় করছেন আসিফ মিল্টন ও সাত্তার হীরা, আবহ সংগীত নির্মাণ করেছেন আবদার, সেট নির্মাণ করেছেন কচি এবং আলোক নির্মাণ করেছেন চন্দন।চলছে মুস্তাফা খালিদের চিত্রপ্রদর্শনী পেশায় স্থপতি। এশিয়াটিক সোসাইটির এশিয়াটিক গ্যালারিতে চলছে মুস্তাফা খালিদের শিল্পকর্মের প্রদর্শনী। মোট ৬৮টি চিত্রকর্ম রয়েছে ‘অব কনফ্লিক্ট অ্যান্ড হারমোনি’ নামের এই প্রদর্শনীতে। বেশির ভাগই নিসর্গদৃশ্য এঁকেছেন এই শৌখিন শিল্পী। শিল্পী জানান, এটি তাঁর দ্বিতীয় একক প্রদর্শনী। প্রদর্শনী থেকে বিক্রয়লব্ধ অর্থের পুরোটাই ব্যয় করা হবে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য। ২২ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে প্রদর্শনী। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত গ্যালারি খোলা থাকে।