বরগুনার রিফাত হত্যা ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রতিবাদ এবং গুজব-গণপিটুনির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি করতে তেঁতুলিয়া থেকে হেঁটে কক্সবাজারের টেকনাফ পৌঁছেছেন সাইফুল ইসলাম নামের এক তরুণ। ৩১ দিনে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে টেকনাফ পৌঁছান সাইফুল। মাথায় জাতীয় পতাকা বাঁধা তরুণটির এক হাতে প্ল্যাকার্ড আরেক হাতে মাইক। প্ল্যাকার্ডে প্রশ্নপত্র ফাঁস, গুজব নিয়ে নানা সতর্কবাণী লেখা।
সাইফুলের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার আমহার গ্রামে। তিনি দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। তেঁতুলিয়া থেকেই তিনি হেঁটে এসেছেন দেশের দক্ষিণের টেকনাফে। উদ্দেশ্য মানুষকে সচেতন করা।
সাইফুল জানান, গত ২১ জুলাই সকালে বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা তেঁতুলিয়ার তেঁতুলতলা থেকে হেঁটে টেকনাফের জিরো পয়েন্টের উদ্দেশে পদযাত্রা শুরু করেন তিনি। প্রথম দিন তিনি তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরের চৌরাস্তার মোড় থেকে হেঁটে ৩৮ কিলোমিটার দূরের পঞ্চগড় জেলা শহরে পৌঁছান। এরপর পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক দিয়ে হেঁটে বগুড়া হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করেন সাইফুল। তারপর সাভারের গাবতলী দিয়ে নারায়ণগঞ্জ হয়ে কুমিল্লা মহাসড়ক ধরে আসেন চট্টগ্রাম নগরে। চট্টগ্রাম থেকে পদযাত্রার ৩১তম দিনে গতকাল দুপুরে পৌঁছান টেকনাফ শহরে।
টেকনাফে এসে সাইফুল পথচারীদের কাছে তাঁর লক্ষ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আইনের শাসনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হলে সমাজে অন্যায়–অত্যাচার, হত্যা, খুন-গুম, ধর্ষণ বেড়ে যায়। বিঘ্নিত হয় সামাজিক নিরাপত্তা। নাগরিকদের এসব নিয়ে ভাবার আহ্বান জানান তিনি।
সাইফুল আরও বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস করে কিছু মানুষ লাভবান হলেও দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ব্যক্তি স্বার্থ ভুলে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করতে সবাইকে তৎপর হতে হবে। পাশাপাশি ছেলেধরা গুজব নিয়ে দেশে যে গণপিটুনি চলছিল এই অপতৎপরতা রুখে দাঁড়াতে হবে।
সাইফুলের বক্তব্য শুনে টেকনাফ সাংবাদিক ইউনিটি সাধারণ সম্পাদক নুরুল হোসাইন বলেন, জনসচেতনতামূলক কাজে এখন তেমন কাউকে পাওয়া যায় না। কমবেশি সবাই ব্যস্ত আখের গোছানো নিয়ে।
সাইফুল বলেন, তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত পৌঁছাতে তাঁকে ১৭টি জেলার আনুমানিক ১ হাজার কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়েছে। প্রতিদিন তিনি গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার পথ হেঁটেছেন। কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে হেঁটে ৩১ দিনের পদযাত্রায় গতকাল দুপুরে তিনি টেকনাফে পৌঁছে তাঁর পদযাত্রার সমাপ্তি ঘটান। এর আগেও নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা নিরসনের জন্য দিনাজপুর ও ঢাকায় মানববন্ধন করেন সাইফুল। সময় পেলে তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে দুর্নীতিবিরোধী কর্মসূচি পালন করেন। টিউশনি আর টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে এমন কর্মসূচি পালন করেন তিনি।