হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নিশ্চিতে ডিএনএ পরীক্ষা নিয়ে যা বলছে সিআইডি

ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় হারিছ চৌধুরীর নাম রয়েছে
 ছবি: ইন্টারপোলের ওয়েবসাইট

হারিছ চৌধুরীর পরিচয় শনাক্তে তাঁর মেয়ে সামিরা চৌধুরীর কোনো চিঠি পায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সংস্থাটি বলছে, সামিরা যদি সত্যিই তাঁর বাবার পরিচয় নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষা করাতে চান, তাহলে তাঁকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। কোনো খোলা চিঠিতে কাজ হবে না।

গত বুধবার পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ও সিআইডির প্রধান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যম মারফত একটা চিঠির কথা শুনছি। তবে এ রকম কোনো চিঠি আমরা হাতে পাইনি। পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ নমুনা পরীক্ষায় কেউ আগ্রহী হয়ে থাকলে তাকে আইন অনুযায়ী এগোতে হবে।’

মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, কারও মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন আছে। তা ছাড়া এ ক্ষেত্রে ডিএনএ অ্যাক্টও অনুসরণ করতে হয়। হারিছ চৌধুরীর বিষয়ে এখন পর্যন্ত এ-সংক্রান্ত কোনো আলোচনা হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র প্রথম আলোকে বলে, গত সোমবার সিআইডিতে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, হারিছ চৌধুরীর পরিচয় শনাক্তে পরিবারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক আবেদনসহ যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণের পদক্ষেপ গ্রহণের আগপর্যন্ত এ ব্যাপারে সিআইডি কিছু করবে না।

তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার গত বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রয়োজনে হারিছ চৌধুরীর ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত চিঠিতে সামিরা নিজেকে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। সামিরা বলেছেন, তাঁর নিজের ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হারিছ চৌধুরীর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। সে কারণে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রসচিবসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে চিঠি দিয়ে তাঁর বাবার ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে নিজের সম্মতির কথা জানিয়েছেন।

চিঠিতে সামিরা আরও বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি তাঁর বাবা হারিছ চৌধুরীর পরিচয় শনাক্ত করতে কোনো উদ্যোগ নেয়, তাহলে তাতে তাঁর কোনো আপত্তি নেই।

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন বলে চলতি বছরের শুরুর দিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে।

গত ১৫ জানুয়ারি মানবজমিন পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, হারিছ চৌধুরী করোনায় সংক্রমিত হয়ে ঢাকায় মারা গেছেন। প্রবাসী মেয়ে সামিরা চৌধুরী বলেন, তাঁর বাবা গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান।

৬ মার্চ মানবজমিন আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ‘হারিছ নয়, মাহমুদুর রহমান মারা গেছেন’ শিরোনামের এই প্রতিবেদনে বলা হয়, হারিছ চৌধুরী দীর্ঘ ১৪ বছর দেশেই আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি তাঁর নাম-পরিচয় বদল করেন। নতুন নাম নেন ‘মাহমুদুর রহমান’। এই নামেই তিনি নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট করেন। তিনি প্রায় ১১ বছর ঢাকার পান্থপথে ছিলেন। নিজেকে একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক বলে পরিচয় দিতেন। ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মৃত্যুর পর তাঁকে সাভারে দাফন করা হয়।

ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় নাম থাকা হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখা থেকে তাঁর সম্পর্কে তথ্য জানা প্রয়োজন বলে জানানো হয়। এনসিবি শাখা ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। রেড নোটিশভুক্ত কোনো আসামির পরোয়ানা প্রত্যাহারের কথা ইন্টারপোলের কাছে এনসিবিকেই জানাতে হয়। কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তাঁর নামে ইন্টারপোলের ইস্যু করা পরোয়ানা প্রত্যাহারের বাধ্যবাধকতা আছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তর চিঠি পাঠায় সিআইডিকে। হারিছ চৌধুরীর ব্যাপারে তথ্য চেয়ে সিআইডিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। সিআইডি সিলেটের পুলিশ সুপারকে তদন্ত করে দেখতে বলে। এরপর যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা ইন্টারপোলের রেড নোটিশ প্রত্যাহারের জন্য যথেষ্ট নয় বলে সিআইডি সূত্রে জানা গেছে।

এখন পর্যন্ত সিআইডি যা জানতে পেরেছে, তা হলো, ‘মাহমুদুর রহমান’ নামে যে পাসপোর্টটি ইস্যু হয়েছে, সেই পাসপোর্টে বিদেশ ভ্রমণের কোনো উল্লেখ নেই। তবে তিনি একবার দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এর বাইরে তিনি এক দিনের জন্য কুমিল্লায় গিয়েছিলেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর হারিছ চৌধুরীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হারিছ চৌধুরীর ৭ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলার একজন আসামি তিনি।

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হারিছ চৌধুরীর খোঁজে তাঁর সিলেটের বাসায় অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তখন থেকেই তিনি পলাতক।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সামিরার চিঠি সম্পর্কে তাঁর এক স্বজন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি জেনেছেন, সামিরা বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন। তিনি তাঁর বাবা হারিছ চৌধুরীর পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষায় আগ্রহী। সামিরা বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। তাঁর মা জ্যোৎস্না আরাও সেখানে আছেন। আর সামিরার ভাই সুইজারল্যান্ডে আছেন।

সামিরা তাঁর বাবা হারিছ চৌধুরীর পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশে আসবেন কি না, এলে কবে আসবেন, সে বিষয়ে ওই স্বজন কিছু বলতে পারেননি।