একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকদের জানানো হয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে আজ বুধবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠকে বিদেশিদের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানানো হয়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জোটের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এ বৈঠক হয়। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা যা বলেছেন তার সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিকদের পর্যবেক্ষণের মিল আছে। তাই তাদের কাছে কূটনীতিকদের খুব বেশি প্রশ্ন ছিল না।
কাউকে দেখলেই পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে কামাল হোসেন বলেন, ‘পুলিশ অসাধারণভাবে তৎপর। এত পুলিশ রাস্তায় টহল দিতে আমি দেখিনি। কাউকে দেখলেই তারা ধরে বসে। কারণ ছাড়াই ধরছে। মানুষ পুলিশি সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। সরকার ভয়ভীতির সৃষ্টি করছে। তারা চাচ্ছে বিরোধীরা যেন নির্বাচনে না আসতে পারে।’ তবে তাঁর কথা শুনে পুলিশের মহাপরিদর্শককে চিঠি দেওয়ার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) ধন্যবাদ জানান তিনি। ঐক্যফ্রন্টের এই শীর্ষ নেতা বলেন, দেশের মানুষ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। সিইসি কে এম নূরুল হুদার অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সে আশঙ্কার কথা উনাকে নিজেই বলে এসেছি। তাঁর নিষ্ক্রিয়তা আমাদের খুব উদ্বিগ্ন করে।’
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকারের চাপেই হোক বা নির্দেশেই হোক নির্বাচন কমিশন সবকিছু দেখেশুনেও চুপ করে থাকে। বৈঠকে উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে কথা বলেছি।’ তবে কূটনীতিকেরা কী বলেছেন, তা তিনি জানাননি। কূটনীতিকদের কাছে কী ধরনের সহযোগিতা চান—এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা যাতে নির্বাচনে অংশ নিই, সে জন্য তারা বহু অনুরোধ করেছে। আমরা তো নির্বাচনে গেলাম। প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছিলেন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। মামলা ও গ্রেপ্তার হবে না। কিন্তু তা বন্ধ হয়নি।’ সরকার তার কোনো কথাই রাখছে না বলে অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা।
বিদেশিদের কাছে বিএনপি মায়া কান্না করে—আওয়ামী লীগের এমন অভিযোগের ব্যাপারে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আওয়ামী লীগও বিদেশিদের নিয়ে বৈঠক করে। কান্নার কিছু নেই। যা সত্য ও বাস্তব তা সবাইকে জানতে দেওয়া উচিত। কারণ, সরকার বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, সরকারই নির্বাচন বানচাল করতে চাচ্ছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট যে ইশতেহার দিয়েছে, তা কূটনীতিকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানান বিএনপির বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন। বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন করতে গিয়ে কীভাবে তারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন এবং প্রার্থীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, সেসব বিষয়ে তাদের বলা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ৩৫টি দেশের কূটনীতিকেরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার বলেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, এখানেও তিনি একই বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে বলে তিনি আশা করেন। নির্বাচনী সহিংসতা বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিস্থিতি ঠিক রাখতে সব দলকে সহিংসতা পরিহার করতে হবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, তুরস্ক, ডেনমার্ক, ফিলিপাইন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের কর্মকর্তারা। ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বিএনপির নেতা তাবিথ আউয়াল, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, জেবা খান প্রমুখ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।