করোনা সংক্রমণ শুরুর পরে দেশে হাত ধোয়ার যে প্রবণতা তৈরি হয়েছিল, তা এখন আর নেই।
দেশে গত বছর করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর সাবান বা তরল সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার প্রবণতা বেড়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস কমছে। বহুজাতিক একাধিক বিপণন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার প্রবণতা কমে যাওয়াকে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনাকালে গড়ে ওঠা হাত ধোয়ার অভ্যাস টিকিয়ে রাখা গেলে ভবিষ্যতে ভালো ফল মিলতে পারত। সাম্প্রতিক সময়ে করোনা ছাড়াও জ্বর, সর্দি–কাশিসহ নানা প্রবণতা বেড়ে গেছে। অন্য ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটছে বলে ধারণা করা হয়। আমাদের হাত ধোয়ার অভ্যাস ঠিক না থাকার ফলে এমনটা হতে পারে।’
আজ শুক্রবার বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে হাত ধোয়া দিবস। ‘আমাদের হাতেই আমাদের ভবিষ্যৎ: চলো একসঙ্গে চলি’ স্লোগান নিয়ে এ দিবস পালন করা হচ্ছে।
করোনা থেকে সুরক্ষায় হাত ধোয়াকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি হিসেবে গণ্য করা হয়। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) হাত ধোয়ার ওপর গুরুত্ব দেয়। গত বছর মার্চে বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর হাত ধোয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রচার শুরু হয় জোরেশোরে। জনসমাগমস্থলে ঢাকাসহ বিভিন্ন সিটি করপোরেশন হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করে। সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানও জনসমাগমস্থলে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখে। সে সময় দেশে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার প্রবণতা বেড়েছিল। তবে এখন তা কমেছে বলে বহুজাতিক বিপণন গবেষণা প্রতিষ্ঠান কান্তার ওয়ার্ল্ড প্যানেল ইন বাংলাদেশের এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন সাবান ও তরল সাবান কোম্পানির বিপণনের চিত্র তুলে ধরে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, গত বছর দেশে সাবানের চাহিদা আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের চেয়ে ১০ শতাংশ বেড়েছিল। কিন্তু এ বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত এ চাহিদা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে। আর গত বছর আগের বছরের তুলনায় তরল সাবানের চাহিদা ৬ থেকে ১২ শতাংশ বেড়েছিল। কিন্তু এ বছর তা গত বছরের তুলনায় ৪ শতাংশ কমেছে।
বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার বাংলাদেশের করপোরেট অ্যাফেয়ার্সের প্রধান শামীমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, তরল সাবানের ব্যবহার শুধু হাত ধোয়াতেই হয়। বর্তমানে তরল সাবানের চাহিদা থেকে ধারণা করা যায়, করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে হাত ধোয়ার যে অভ্যাস ছিল, তা এখন কমে গেছে।
ওয়াটারএইডের দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের আচরণগত পরিবর্তন প্রজন্ম ধরে চলার পর একটি সামাজিক রীতি হিসেবে গড়ে ওঠে। যেমনটা আমাদের টিকার ক্ষেত্রে হয়েছে। এখন হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে এটি করতে হলে শুধু সরকার নয়, ব্যক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসতে হবে। কোভিডকালে যেভাবে তারা প্রচার চালিয়েছে, তার ধারাবাহিকতা রাখতে হবে।’