হাতের টানে উঠে যাচ্ছে পিচ

আশুগঞ্জ-ব্রাহ্মণবাড়িয়া আঞ্চলিক সড়কের নিম্নমানের সংস্কারকাজের অভিযোগ। হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে আসছে সড়কের পিচ। গতকাল আশুগঞ্জ উপজেলা সদরের আলমগনরে। ছবি: প্রথম আলো
আশুগঞ্জ-ব্রাহ্মণবাড়িয়া আঞ্চলিক সড়কের নিম্নমানের সংস্কারকাজের অভিযোগ। হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে আসছে সড়কের পিচ। গতকাল আশুগঞ্জ উপজেলা সদরের আলমগনরে।  ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ-ব্রাহ্মণবাড়িয়া আঞ্চলিক সড়কের ৮ কিলোমিটারের সংস্কারকাজে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতের টানে উঠে আসে সড়কের পিচ। তাঁদের বাধার মুখে এলজিইডি এই সংস্কারকাজ বন্ধ করে দিয়েছে।

৫ ডিসেম্বর আশুগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন, তালশহরের ইউপি চেয়ারম্যান আবু শামা ও আড়াইসিধার ইউপি চেয়ারম্যান মো. সেলিম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের অনুলিপি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ও জেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে পাঠানো হয়। আর নিম্নমানের নির্মাণকাজ বন্ধ করে কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ না করলে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, আশুগঞ্জ-তালশহর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া আঞ্চলিক সড়কের ৮ কিলোমিটার সংস্কারকাজের জন্য গত বছর দরপত্র আহ্বান করা হয়। একই বছরের ১৬ জুন রাস্তার সংস্কারকাজের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের বন্যা ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পল্লি সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন প্রকল্পের (এফডিডিআরআইআরপি) অধীনে ৮ কিলোমিটার এই সড়কের নির্মাণকাজের চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছে ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। কাজের দায়িত্ব পায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেসার্স লোকমান হোসাইন ও মেসার্স মোস্তফা কামাল (জেভি) নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে মেসার্স লোকমান হোসাইন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই সংস্কারকাজ করছে। চুক্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ২৩ জুন কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেপ্টেম্বরে সংস্কারকাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আগামী বছরের ১৯ মার্চ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিম্নমানের পাথর, ইট, বালু, খোয়া ও ম্যাকাডম দিয়ে কাজ করছিলেন ঠিকাদার। ৪ ডিসেম্বর এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বাধা দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। পরে উভয় পক্ষের সমঝোতায় কাজ আবার শুরু হয়। কিন্তু আবারও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করেন ঠিকাদার। 

গত শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, নিম্নমানের ইটের খোয়া, বিটুমিন এবং মাটিমিশ্রিত পাথরসহ অন্যান্য উপকরণ দিয়ে চলছে সংস্কারকাজ। এর ফলে হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে আসছে সড়কের পিচ। নিম্নমানের এই কাজ দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপজেলা সদরের ইউপি চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন ও স্থানীয় বাসিন্দারা। 

আশুগঞ্জ সদর ইউপির চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘নিম্নমানের কাজের ব্যাপারে আমরা এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দিয়েছি। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে সংস্কারকাজ অব্যাহত রাখলে আমরা আন্দোলন করব।’ 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স লোকমান হোসাইনের স্বত্বাধিকারী লোকমান হোসাইন বলেন, ‘রাস্তায় কোনো ধরনের নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে না। যদি হয়েও থাকে, সেটি দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছে।’ 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল শনিবার সকালে ওই রাস্তায় পরিদর্শনে গিয়ে সংস্কারকাজ বন্ধ করে দিয়েছি। স্থানীয় বাসিন্দারা যেহেতু চাইছেন না, তাই কাজ বন্ধ থাকবে। আর ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় সব ঠিক থাকলে, তারপর ঠিকাদার বিল পাবেন।’