হাজি মো. সেলিম আজ রোববার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। ঢাকা, ২২ মে
হাজি মো. সেলিম আজ রোববার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। ঢাকা, ২২ মে

হাজি সেলিমকে পাঠানো হলো কারাগারে

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিমকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭-এর বিচারক আজ রোববার এই আদেশ দেন। তার আগে হাজি সেলিম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তিনি জামিনের আবেদন জানান। আবেদন নাকচ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় হাজি সেলিমের ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এ রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাঁকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭-এ আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছিল।

আদালতে হাজি মো. সেলিম। ঢাকা, ২২ মে

হাজি সেলিম এখন ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য। এ মামলায় ১৩ বছর আগে বিচারিক আদালতের রায়ের পর তাঁকে মাসখানেক কারাগারে থাকতে হয়েছিল। পরে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জামিনে বের হন তিনি। মাঝের এ সময়ে তিনি দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

হাজি সেলিম ও তাঁর স্ত্রী গুলশান আরার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মামলা করে দুদক।

বিচারিক আদালত ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল রায় দেন। রায়ে হাজি সেলিমের ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে তাঁকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাঁকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর সম্পদের তথ্য গোপনের দায়ে তাঁকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। উভয় দণ্ড একসঙ্গে চলবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

হাজি সেলিম এখন ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য

অবৈধ সম্পদ অর্জনে হাজি সেলিমকে সহযোগিতা করার দায়ে তাঁর স্ত্রী গুলশান আরাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড, ১ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

একই সঙ্গে এই দম্পতির অবৈধভাবে অর্জিত প্রায় ২৭ কোটি টাকার সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেওয়া হয়।

বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে হাজি সেলিম এবং ২০১৩ সালে তাঁর স্ত্রী পৃথক আপিল করেন।

হাজি সেলিমের আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি তাঁর সাজা বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্ট। এই রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল বিভাগে আবেদন করে।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় হাজি সেলিমের ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়

দুদকের আপিলের শুনানি নিয়ে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করেন আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে হাইকোর্টে হাজি সেলিমের আপিলের ওপর আবার শুনানি করতে বলা হয়।

হাজি সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর মারা যান।

গত বছরের ৩১ জানুয়ারি হাজি সেলিমের আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর করা আপিলটিও হাইকোর্টে শুনানির জন্য ওঠে।

হাজি সেলিম দম্পতির করা পৃথক আপিলের ওপর শুনানি শেষে গত বছরের ৯ মার্চ হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন।

হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে হাজি সেলিমকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭-এ আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছিল

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে হাজি সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১০ বছরের সাজা বহাল রাখেন হাইকোর্ট। তবে সম্পদের তথ্য গোপনের জন্য বিচারিক আদালতের দেওয়া ৩ বছরের কারাদণ্ড থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়। হাজি সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা মারা যাওয়ায় তাঁর আপিলটি বাতিল (অ্যাবেট) করা হয়।

হাজি সেলিম সম্প্রতি কঠোর গোপনীয়তায় দেশ ছেড়েছিলেন। তাঁর এই দেশত্যাগ নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা হয়। দণ্ড নিয়ে তাঁকে দেশত্যাগে যাঁরা সহযোগিতা করেছিলেন, তাঁদের শাস্তির দাবি ওঠে। পরে তিনি দেশে ফেরেন।

আদালতের আদেশের পর বিকালে হাজি সেলিমকে নিয়ে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ।