কবি আসাদ চৌধুরী লিখেছিলেন, ‘প্রশ্ন নেই, উত্তরে পাহাড়!’ এখন পরিস্থিতি এ রকম দাঁড়িয়েছে, অজস্র অসংখ্য প্রশ্ন তিরের ফলার মতো ধেয়ে আসছে, কিন্তু উত্তরে কেবল মৌন। নীরবতা! কত শত ব্যাকুল আকুল প্রশ্ন নাগরিকদের!
এত এত মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কেন? ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মানুষ মারা যাচ্ছে কেন? মশাকেই জানি ডেঙ্গুর বাহক, তাহলে মশা মারার উদ্যোগ নেই কেন? উদ্যোগই যদি থাকবে, তাহলে মশা মরল না কেন? মশাই যদি মারতে না পারলাম, তাহলে সিটি করপোরেশনের মেয়ররা করলেনটা কী?
এত শিশু ধর্ষণ, নারী নির্যাতন কেন? কেন প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা?
তারপরের প্রশ্ন, এই যুগে, মানুষ চাঁদে যাওয়ার ৫০ বছর পরে কী করে গুজব রটানো সম্ভব হয় যে সেতু বানাতে মানুষের মাথা লাগে? রক্ত লাগে? যখন এই গুজব প্রথম ছড়িয়ে পড়ল, তখন সেতু কর্তৃপক্ষের একটা দীনহীন বিবৃতি ছাড়া আর কেউ কোনো কথা বলল না কেন? আর এখন যখন গণপিটুনিতে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে নিরীহ মানুষ, তখন মানুষের কাছে কোনো নেতা, এমপি, মন্ত্রী কেন ছুটে যাচ্ছেন না? বাংলাদেশে তাহলে ৩৫০ জনপ্রতিনিধি কোন জনতাকে প্রতিনিধিত্ব করছেন? এসবই জামায়াত-বিএনপির নিখুঁত ষড়যন্ত্র হলে সরকারি দল কী করল? সরকারের প্রশাসনযন্ত্র কী করল? এত এত সংস্থা কী করল? যে বিএনপি নির্বাচনে গিয়ে ১০টা আসন ধরে রাখতে পারল না, সেই বিএনপি এত নিখুঁত কর্ম সম্পাদনের দক্ষতা অর্জন করে ফেলল ব্যর্থতার কোন ফোকর গলে?
শেয়ারবাজারে ধস নেমে সর্বরেকর্ড ভঙ্গ হলো, কর্তৃপক্ষ করলটা কী? সরকার বললটা কী? ব্যাংক কিংবা আর্থিক লেনদেনের প্রতিষ্ঠানে টাকা নেই, ভবিষ্যতে বড় বিপর্যয় ঠেকাতে সরকার পারবে তো? টাকা পাচার হচ্ছে, দেশের টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে, সরকারে কেউই থাকবেন না যিনি বলবেন, খবরদার, দেশের টাকা দেশে থাকতে হবে, ব্যাংকের ঋণের টাকা ফিরিয়ে দাও, তা না হলে এই যে দেখো কতটা কঠোর হতে পারি!
কেউ নেই বলবার মতো! দেশের ভালো দশের ভালো কেউই চান না, তা হতে পারে? আচ্ছা, দেশ তো বিমূর্ত, নিজের ভবিষ্যৎ ভালো চান না, নিজের ভালো বোঝেন না, তা তো হতে পারে না। তাহলে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আনতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, আমরা কি জানতে চাইতে পারি না?
শত শত প্রশ্ন আসছে, কেউই কোনো কথা বলছে না! সব দায়িত্ব একা প্রধানমন্ত্রীর! তাহলে এত বড় সরকার কেন? এত বড় দল, এত বড় মহাজোট কেন? নেতারা এলাকায় এলাকায় যান না কেন? গুজবের বিরুদ্ধে দাঁড়ান না কেন? এত বড় বন্যা হয়ে যাচ্ছে, কোনো নড়াচড়া তো দেখি না। মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াবে না!
ঘটনা কী? ঘটে গেলটা কী? সরকারের সঙ্গে দলের, দলের সঙ্গে রাজনীতির, রাজনীতির সঙ্গে মানুষের বিচ্ছিন্নতা ঘটে গেছে, এ কি তারই ফল? গুজবের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয় সেতু কর্তৃপক্ষ, বিবৃতি দেয় পুলিশ, জনপ্রতিনিধিরা গেলেন কই?
মাথায় কত প্রশ্ন আসে, দিচ্ছে না কেউ জবাব তার, সবাই বলে মিথ্যে বাজে বকিস নে আর খবরদার! শুধু খবরদার বলে কি মানুষের মনে জাগা প্রশ্ন, উদ্বেগ, শঙ্কা, আকুলতা স্তব্ধ করে দেওয়া যাবে!
সরকার যে আছে, দল যে আছে, জনপ্রতিনিধিরা যে আছেন, মেয়রেরা যে আছেন, প্রশাসন আছে, তার প্রমাণ দিতে হবে—মানুষের মধ্যে গিয়ে, মানুষের প্রশ্নের জবাব দিয়ে। কাজ করে, কাজের মাধ্যমে। ভয় হচ্ছে, সবকিছু না আবার ভেঙে পড়ে! মেরামতের অযোগ্যভাবে ভেঙে পড়ে! বিশেষ করে অর্থবাজারে যে অশনিসংকেত, তাতে সাড়া দিয়ে ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়ার সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে! সময়ের হাতে প্রতিবিধানের ভার তুলে দিয়ে নিশ্চেষ্ট বসে থাকা হবে আত্মঘাতী!
একটা কিছু বলুন। একটা কিছু করুন।