মৌলভীবাজারে অবস্থিত হাকালুকি হাওরে কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে ভেসে উঠেছে। অধিক তাপমাত্রায় আগাছা পচে পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাস বেড়ে যাওয়ায় মাছে মড়কের সৃষ্টি হয় বলে জানাচ্ছেন মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, মড়ক ঠেকাতে তাঁদের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পানির স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে এসেছে। এ নিয়ে আশঙ্কার কারণ নেই।
এর আগে ২০১৭ সালের এপ্রিলে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাওরের কাঁচা এবং আধা পাকা বোরো ধান তলিয়ে গিয়েছিল। তখন ধান পচে পানি দূষিত হয়ে পড়ে। এতে হাওরে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী মারা যায়।
স্থানীয় ও মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, হাকালুকি হাওরটি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার প্রায় ২৮ হাজার হেক্টরজুড়ে বিস্তৃত। ১১ সেপ্টেম্বর হাওরের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা অংশের বিভিন্ন স্থানে নানা প্রজাতির ছোট-বড় কিছু মাছ মরে পানিতে ভেসে ওঠার খবর পায় মৎস্য বিভাগ। এর পরপরই মৎস্য বিভাগের লোকজন সরেজমিনে বিষয়টির সত্যতা পান। এ অবস্থায় হাওরের পানির স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে ১২ সেপ্টেম্বর মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে গৌড়কুড়ি, চকিয়া, ধলিয়া, নাগুয়া, কানলি এবং হাওয়াবন্যা বিলসহ এর আশপাশের এলাকায় ৫৮০ কেজি জিওলাইট ও ২০ কেজি টিমসেল ছিটিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় মৌলভীবাজারের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদুল হকসহ সংশ্লিষ্ট মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিনে গত শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দেখা গেছে, হাওরে পানি কমতে শুরু করেছে। হাওরের জুড়ী অংশের চাতলা ও নাগুয়া এবং কুলাউড়ার চকিয়া বিলের আশপাশে কিছু দেশি পুঁটি, বাইন ও ট্যাংরা মাছ মরে ভেসে আছে।
চাতলা বিলের কাছে হাওরের ভাসান পানিতে বেড়জাল টেনে মাছ ধরছিলেন ১০-১৫ জন মৎস্যজীবী। তাঁরা বললেন, তিন-চার দিন ধরে মাছ মরে ভেসে উঠছে। এর কারণ তাঁদের জানা নেই।
চাতলা বিলের ইজারাদার প্রতিষ্ঠান জুড়ী ভ্যালি মৎস্যজীবী সমিতির সম্পাদক জমির আলী বলেন, দু-তিন দিন আগে তাঁদের বিলের ভেতরেও কিছু মাছ মরে ভেসে উঠেছিল। তবে নতুন করে আর মাছ মরেনি।
চকিয়া বিলের ইজারাদার প্রতিষ্ঠান সুরমা মৎস্যজীবী সমিতি লিমিটেডের সদস্য বাহুল উদ্দিন বলেন, মাছে মড়ক দেখা দেওয়ার পর তাঁরা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের শরণাপন্ন হন। জিওলাইট ও টিমসেল ছিটানোর পর আর মাছ মরছে না।
কুলাউড়া উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা (বড়লেখা উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্বে) সুলতান মাহমুদ বলেন, মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ১১ সেপ্টেম্বরেই তাঁরা হাওরের কয়েকটি এলাকা পরিদর্শনে যান। এ সময় সেখানে নানা প্রজাতির ছোট-বড় মাছ মরে ভেসে উঠতে দেখা যায়। তবে এর সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। সুলতান মাহমুদ বলেন, অ্যামোনিয়া বেড়ে যাওয়ায় মাছে মড়কের সৃষ্টি হয়েছিল। পানির গুণাগুণ রক্ষায় জিওলাইট এবং দূষণ ঠেকাতে জীবাণুনাশক হিসেবে টিমসেল ছিটানো হয়েছে। পানির স্বাভাবিক পরিবেশ এখন ফিরে এসেছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, সম্প্রতি তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছিল। এতে পানির নিচে থাকা আগাছা পচে অ্যামোনিয়া গ্যাস বেড়ে গিয়েছিল। এ কারণে কিছু মাছ মরে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। এটা নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই।