নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণার রায়ে স্থগিতাদেশের মেয়াদ ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বেড়েছে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) শুনানি ১০ অক্টোবর পর্যন্ত মুলতবি করেছেন আপিল বিভাগ। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ সময় পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।
সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একপর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনাকে একটা তালিকা দেব। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার আইনটি ফৌজদারি কার্যবিধির বেশ কয়েকটি ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক, এটি আপনি দেখবেন। এটি (ভ্রাম্যমাণ আদালতসংক্রান্ত) যত দ্রুত শুনানি করে ফেলবেন, ততই আপনাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে।’
পরে নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়ে আপিল শুনানির জন্য ধার্য ছিল। সেই আপিল শুনানির জন্য সময় চেয়েছি। আগামী ১০ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। সে পর্যন্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা তাঁদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন।’
পৃথক তিনটি রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ১১ মে হাইকোর্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এ রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে ১৪ মে চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করে বিষয়টি নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এরপর আপিল বিভাগ গত ২১ মে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলে আগে দেওয়া স্থগিতাদেশের মেয়াদ কয়েক দফা বৃদ্ধি করেন। সর্বশেষ রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১ আগস্ট আপিল বিভাগ দুই সপ্তাহ সময় দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বিষয়টি ওঠে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম অবকাশের পরে শুনানির জন্য সময় চেয়ে বলেন, প্রস্তুতির জন্য সময় দরকার। পরে আদালত ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বিষয়টি মুলতবি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক, রিট আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী হাসান এম এস আজিম।
এদিকে সম্পূরক খাদ্য হিসেবে (ফুড সাপ্লিমেন্ট) পরিচিত দেশান বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের আমদানি করা ‘স্পিরুলিনা’ মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কি না, তা পরীক্ষার জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের একই বেঞ্চ ওই আদেশ দেন।
আইনজীবী সূত্র বলেছে, মালয়েশিয়া থেকে দেশান ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৯৮০ পিস স্পিরুলিনা আমদানি করে। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঔষধ প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই স্পিরুলিনা জব্দ করেন, সেই সঙ্গে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ২ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন। এর বৈধতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হাইকোর্টে রিট করেন। একই বছরের ১৮ মে হাইকোর্ট ভ্রাম্যমাণ আদালতের আদেশ স্থগিত করে জব্দ করা ওই স্পিরুলিনা ছাড় দিতে নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। ২০১৬ সালের ২৭ জুন হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার বিচারপতি। পরে নিয়মিত আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। জব্দ থাকা ওই স্পিরুলিনার মেয়াদ আগামী বছরের এপ্রিলে শেষ হয়ে যাচ্ছেউল্লেখ করে রিট আবেদনকারীর অনূকুলে ওই স্পিরুলিনা দিতে আবেদন করে দেশান। এটি গতকাল শুনানির জন্য ওঠে।