লাভ বেশি হওয়ায় রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার অনেক কৃষক ধান ছেড়ে হাঁড়িভাঙা আমের চাষ করছেন। এ বছর উপজেলায় হাঁড়িভাঙা আমের ফলনও ভালো হয়েছে। এখন এ আম প্রতি কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা খোরশেদ আলম জানান, উপজেলায় ২ হাজার ৮০০ জন আমচাষি আছেন। তাঁদের মধ্যে ৪৩০ জন এ বছর ধানের বদলে আম চাষ করেছেন। গতকাল সোমবার উপজেলার পদাগঞ্জ বাজারে ২০০ থেকে ২১০ টাকা কেজি দরে আম বিক্রি করতে দেখা গেছে। পদাগঞ্জ গ্রামের জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘হাঁড়িভাঙা হামার কপাল খুলি দিছে। মৌসুমের শুরুতে এ আম প্রতি কেজি ৫০ টাকা ও শেষের দিকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।’
মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ৩ হাজার ৮০০টি হাঁড়িভাঙা আমের বাগান আছে। দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক মহেশ চন্দ্র বলেন, জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এ আম পাওয়া যায়। আমটি দেখতে প্রায় গোলাকার। নিচের দিকের তুলনায় বোঁটার দিকে কিছুটা মোটা। নিচের দিকে যেখানে ফলে ভাঁজ, সে স্থানটি অন্য আমের তুলনায় বেশ উঁচু। এটাই হাঁড়িভাঙা আমের মূল বৈশিষ্ট্য। ওজনভেদে একটি আম ১৫০-৪৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ গাছ প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়।
বারোঘরিয়া সর্দারপাড়া গ্রামের চাষি আবদুস সালাম বলেন, আগে তিনি আট একর জমিতে ধান চাষ করে খরচ বাদে বছরে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা আয় করতেন। এখন ওই জমিতে আম চাষ করে পান সাত লাখ টাকা।
উঁচা বালুয়া গ্রামের চাষি আনারুল হক বলেন, তিনি আগে দুই একর জমিতে ধান চাষ করতেন। কিন্তু লাভ বেশি দেখে চার বছর আগে ওই জমিতে তিনি আমের বাগান করেছেন। এ বছর ওই জমির আম বিক্রি করে লাভ করেছেন ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
খোড়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর-আলম বলেন, এ আমের চাষ শুরু হওয়ার পর ১০-১২ বছরের মধ্যে এখানকার অনেক কৃষক ধান চাষ ছেড়ে দিয়েছেন। আম বাগানে সাথি ফসল হিসেবে হলুদ চাষ করে একরে কয়েকজন কৃষকের ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বাড়তি আয় হচ্ছে।
টেকানি গ্রামের মজিবার রহমান বলেন, বর্তমানে মিঠাপুকুর ছাড়াও বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, পীরগঞ্জ, পীরগাছাসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় হাঁড়িভাঙা আম চাষের বিস্তার ঘটছে। অনেকে এ আমের চারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়ে লাগাচ্ছেন। এতে কয়েকজন সাফল্যও পেয়েছেন।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা খোরশেদ আলম জানান, মিঠাপুকুরে ৭২৫ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙা আমের বাগান আছে। প্রতিবছর আমের বাগান বাড়ছে। লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা নিচু জমিতেও আমের বাগান করছেন। সব মাটিতে এ আমের চাষ করা যায়। তবে এঁটেল ও দোআঁশ মাটি এ আমের চাষের জন্য বেশি উপযোগী। প্রতি একরে ৯২-১০০টি চারা লাগানো যায়।