অল্প দূরত্বে যাওয়ার জন্যও কেউ কেউ রিকশায় চড়েন। আবার রাস্তায় লোকজনের ভিড় অথবা ফুটপাতের অভাবের কারণে অনেকে ইচ্ছে থাকলেও হাঁটেন না। কেউ কেউ গাড়ি আছে বলে একেবারেই হাঁটতে নারাজ। কেউ-বা দু-তিনতলায় ওঠা-নামা করতে সিঁড়ির পরিবর্তে লিফট ব্যবহার করেন।
সূর্যকে আড়াল করছে বহুতল ভবন, তাই শরীরে সরাসরি রোদ পড়ে না—এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তাঁরা সূর্যালোকের ভিটামিন ডি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর বাহারি নানা রকমের উপাদেয় খাবারে অভ্যস্ত অনেকে ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ ছোট মাছ বা শাকসবজি একেবারেই খাচ্ছেন না।
শহুরে জীবনযাপনের এই বাস্তবতা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। শারীরিক পরিশ্রম, ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড়-মাংসে বাসা বাঁধে জটিল রোগ। অস্টিওপোরোসিস বা হাড়-ফোপড়া এমনই একটি গুরুতর রোগ। অনেক সময় ওষুধে তা সারে না। বরং বাড়ে রোগীর ভোগান্তি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এই দুরারোগ্য অসুখ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। প্রতিরোধের চেষ্টা করাটাই সবচেয়ে ভালো।
গতকাল মঙ্গলবার ছিল বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবস। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মাস্কুলো-স্কেলেটাল মেডিসিনের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিলন হলে কর্মশালা, বৈজ্ঞানিক সেমিনার এবং জনসচেতনতামূলক চিকিৎসক-জনতা মতবিনিময় ও সম্মিলনসভা অনুষ্ঠিত হয়। তিন পর্যায়ে সকাল নয়টা থেকে শুরু করে বেলা দুইটা পর্যন্ত চলে অনুষ্ঠান।
‘অস্টিওপোরোসিস সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান ও দক্ষতা’ শীর্ষক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ৬০ বছরের বেশি বয়সী প্রতি তিন নারীর একজন এবং প্রতি পাঁচ পুরুষের একজন অস্টিওপোরোসিসে ভুগছেন। বাংলাদেশে এ রোগের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান না থাকলেও বাস্তব চিত্রটা উদ্বেগজনক। মেনোপজ-পরবর্তী সময়ে নারীরা সাধারণত এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন। প্রথমবার হাড় ভাঙার আগে রোগটির কোনো উপসর্গ ধরা পড়ে না। ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও সূর্যালোক হচ্ছে হাড় সুস্থ রাখার উপাদান। কিন্তু এ দেশের মানুষের এ তিনটি উপাদান গ্রহণের পরিমাণই অপর্যাপ্ত।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধের জন্য জনসচেতনতা জরুরি। এ রোগে আক্রান্ত হলে কোমরব্যথা, ওজন হ্রাস, নড়াচড়ায় কষ্ট, হাঁটায় অনিচ্ছা, শরীর বিকৃতি, আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি, হতাশা ও অবসাদ দেখা দেয় এবং হাড় সহজেই ভেঙে যায়। প্রতিরোধের জন্য ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম গ্রহণের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ক্যাফেইন, চকলেট ও অতিরিক্ত আমিষজাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে। শুয়ে-বসে অলস জীবন কাটানোর অভ্যাস ছাড়তে হবে। ধূমপান, তামাক ও অ্যালকোহল বর্জন করতে হবে। ছোট মাছ, বাদাম, কচু, শাকসবজি, লেবু ইত্যাদি খাবার নিয়মিত খেতে হবে।
কর্মশালায় অর্ধশতাধিক নবীন চিকিৎসক অস্টিওপোরোসিস রোগের আধুনিক চিকিৎসা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নেন। এতে মূল বক্তব্য দেন চিকিৎসক মশিউর রহমান ও মো. মনিরুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক শামসুন নাহার এবং অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান। পরে ‘সবাই মিলে বইব হাড়ের ভার’ শীর্ষক মতবিনিময় ও সম্মিলনসভায় বক্তব্য দেন সোসাইটির সদস্যসচিব মনিরুল ইসলাম। এরপর রোগটির প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে মতবিনিময় করেন চিকিৎসক, রোগী, সংবাদকর্মী এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান। সভাপতিত্ব করেন মাস্কুলো-স্কেলেটাল মেডিসিন সোসাইটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এ কে এম সালেক।