ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচনে আবাসিক হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র চায় ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফেডারেশন। আজ সোমবার দুপুরে পৃথক কর্মসূচিতে সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র করার দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়। আগামী মার্চে এ নির্বাচন হবে।
দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমাবেশ করে ছাত্র ইউনিয়ন। মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্র ফেডারেশন। কাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় তাঁদের দাবিগুলো অনুমোদিত না হলে ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন সংগঠন দুটির নেতারা।
ছাত্র ইউনিয়নের সমাবেশ
ছাত্র ইউনিয়নের সমাবেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক, ডাকসুর সাবেক একজন নেতাসহ প্রগতিশীল ছাত্র জোটভুক্ত অন্যান্য বামপন্থী সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।
সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি জি এম জিলানী শুভ বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে আন্তরিকতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। তবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে না পারলে সেই নির্বাচন প্রহসনের বেশি কিছু হবে না। শিক্ষার্থীরা যাতে নির্ভয়ে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পারে, তার জন্য আমরা হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র করার দাবি জানিয়েছি। নির্বাচনের যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করতে কালকের সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত দাবিগুলোকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে হবে।’
প্রগতিশীল ছাত্রজোটের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও হলগুলোয় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের প্রচণ্ড দখলদারি রয়েছে। গণরুম, গেস্টরুমের মাধ্যমে তারা তাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখছে। প্রশাসনও রীতিমতো তাদের সহযোগিতা করছে।
সালমান বলেন, ‘সহাবস্থান ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত না করে এ অবস্থায় ডাকসু নির্বাচন দিলে সেটি সুষ্ঠু হবে না। তাই আমরা এবারের ডাকসু নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রগুলো হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে করার দাবি জানিয়েছি। সিন্ডিকেট সভায় এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হলে আমরা নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করব।’
সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক বলেন, ‘সব ছাত্রসংগঠনের দুটি মৌলিক দাবি—ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সব সংগঠনের সহাবস্থান ও হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র করা। হলে সহাবস্থান নেই, তাই ভোটকেন্দ্র অবশ্যই হলের বাইরে করতে হবে। হলে ভোটকেন্দ্র হয়ে ৩০ ডিসেম্বরের মতো আরও একটি কলঙ্কিত নির্বাচন হোক, তা আমরা চাই না। আমাদের যেসব শিক্ষক নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছেন, তাঁদের কর্মকাণ্ডে আমরা স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন দেখতে চাই।’
ডাকসুর সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক নাসির উদ দৌজা বলেন, ‘ছাত্ররা হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র করার দাবি তুলেছেন; যদিও গঠনতন্ত্রে ভোটকেন্দ্র হলে করার কথা বলা হয়েছে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই হলের থাকে না। তাই তারা একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র চায়। আমার মনে হয়, এই দাবি যৌক্তিক। ছাত্রদের এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানাচ্ছি।’
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন সুজন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
ছাত্র ফেডারেশনের সংবাদ সম্মেলন
ছাত্র ইউনিয়নের সমাবেশের পর দুপুরেই ডাকসু নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র, প্যানেল ভাবনা ও নির্বাচনী আচরণবিধির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্র ফেডারেশন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন।
ছাত্র ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘হল প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হলের ভেতর প্রায় সব শিক্ষার্থীর ওপর আধিপত্য বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণ করছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। গণরুম ও গেস্টরুম নির্যাতনে অনেক শিক্ষার্থী শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেছেন। নির্যাতনের শিকার হয়ে হাফিজুর মোল্লা মারা গেছে। হাফিজুর হাজার হাজার নির্যাতিত সাধারণ শিক্ষার্থীর প্রতিচ্ছবি। এ অবস্থায় হলে ভোটকেন্দ্র রাখলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। হলের বিশেষ ভীতিকর পরিস্থিতিতে অনুষদে ভোটকেন্দ্র নিতে কোনো বাধা নেই।’
সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘ছাত্রলীগের মতো দখলদার সংগঠনের বিপরীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তি বাদে সবাইকে নিয়ে ৩৮ হাজার শিক্ষার্থীর অধিকারের পক্ষে বৃহত্তর ঐক্য দরকার। আমরা সেই ঐক্যই গড়ার চেষ্টা করছি। ডাকসু নির্বাচনে আমরা বৃহত্তর ঐক্য থেকেই সব প্যানেল দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।