হবিগঞ্জে আজ বুধবার বেলা আড়াইটায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষে ১৫ জন পুলিশসহ শতাধিক নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই পুলিশের ছোড়া গুলিতে আহত হন বলে জানা গেছে। সংঘর্ষের কারণে আজ বিকেলে জেলা বিএনপির পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়।
পরে কেন্দ্র থেকে আসা বিএনপির নেতারা জেলা বিএনপি নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র জি কে গউছের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সন্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সমাবেশের আগেই পুলিশ উসকানি দিয়ে বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। সমাবেশস্থলে নেতা–কর্মীদের বাধা দিতে গিয়ে হবিগঞ্জ শহরে অঘোষিত কারফিউ জারি করে। জেলা সদরে প্রবেশপথে পুলিশ নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালায় এবং গুলি ছোড়ে। এতে বিএনপির প্রায় ৩০০ নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশই পুলিশের ছোড়া গুলিতে আহত হন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়। মূলত পূর্বনির্ধারিত বিএনপির সমাবেশ পণ্ড করার জন্য পুলিশ এ ঘটনা ঘটায় বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতারা।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, আওয়ামী লীগ বিএনপিকে মোকাবিলা করতে ভয় পায়। এ কারণে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করছে। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ যত দিন ক্ষমতায় থাকবে, তত দিন এ দেশে গণতন্ত্র কায়েম হবে না। এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবদিন ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অনুয়ায়ী আজ বিকেলে হবিগঞ্জ জেলা সদরে এক সমাবেশের আয়োজন করে জেলা বিএনপি। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সমাবেশের জন্য বিএনপি হবিগঞ্জ পৌরসভার মাঠ বরাদ্দ চায়। কিন্তু প্রশাসন থেকে অনুমতি মেলেনি। পরে বিএনপি শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় অবস্থিত জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে বেলা দুইটায় সমাবেশের স্থান নির্ধারণ করে। সকালেই বিভিন্ন স্থান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতা–কর্মীরা সমাবেশে আসতে চাইলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। বেলা আড়াইটার দিকে শহরের কোর্ট মসজিদ এলাকা থেকে বিএনপির নেতা–কর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যেতে চাইলে হবিগঞ্জ সদর থানার সামনে পুলিশের সঙ্গে নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে নেতা–কর্মীরা ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশ নেতা–কর্মীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছুড়ে। পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া হয়।
এ সময় শহরের সার্কিট হাউস রোড ও থানার মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে এ সংঘর্ষ শহরের শায়েস্তানগর ও শায়েস্তানগর বাজার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ৪০ মিনিট পুলিশ ও বিএনপির নেতা–কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। এ সময় গোলাগুলির শব্দে শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। শহরের প্রধান সড়কে প্রায় এক ঘণ্টা সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সংঘর্ষ চলাকালে ১৫ জন পুলিশসহ বিএনপির শতাধিক নেতা–কর্মী আহত হন।
আহত জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ রাজীব আহমেদ, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল আহাদ তুষার, ছাত্রদল নেতা সাইদুর রহমানকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
হবিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলীর দাবি, বিএনপির নেতা–কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। বিএনপির নেতা–কর্মীদের হামলায় তাঁদের ১৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁরা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।