বেপরোয়াভাবে বা অবহেলা করে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনায় কেউ গুরুতর আহত বা কারও মৃত্যু হলে চালককে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। তবে তদন্তে যদি দেখা যায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চালক বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, তাহলে দণ্ডবিধি ৩০২ অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে। অর্থাৎ সাজা হবে মৃত্যুদণ্ড। তবে এটা তদন্ত সাপেক্ষে এবং তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধারা নির্ধারণ করবে।
এসব বিধান রেখে আজ সোমবার মন্ত্রিসভায় সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮–এর খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত জানান।
এরপর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজ দপ্তরে প্রস্তাবিত আইনের ব্যাখ্যা দেন। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বেপরোয়া ও অবহেলা করে গাড়ি চালানোয় কেউ গুরুতর আহত বা কারও মৃত্যু হলো সে জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছর সাজা হবে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, যদি তদন্তে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায় তাহলে দণ্ডবিধি ৩০২ এবং ক্ষেত্রমতে ৩০৪ এই আইনে প্রযোজ্য হবে। তার মানে, কোনো একটা দুর্ঘটনা হলো। কিন্তু দেখা গেল, তা শুধু সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে না, এখানে চালক ইচ্ছে করলে দুর্ঘটনা এড়াতে পারতেন এবং তিনি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তখন দণ্ডবিধির ৩০২ অনুযায়ী বিচার হবে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘কিন্তু মনে রাখতে হবে, তদন্ত ও তথ্যের ওপর নির্ভর করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এটা ঠিক করবে।’
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম আইনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, চালকদের কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি বা সমমানের পাস হতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কেউ গাড়ি চালাতে পারবেন না। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইনে চালকের ভুলের জন্য ১২টি পয়েন্ট রাখা হয়েছে। অপরাধের সঙ্গে সঙ্গে এসব পয়েন্ট কাটা যাবে। পয়েন্ট এভাবে শূন্য হয়ে গেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে।
শফিউল আলম বলেন, প্রস্তাবিত আইনে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে : গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না, সিট বেল্ট বাঁধতে হবে, নারীদের আসনে অন্য কেউ বসতে পারবে না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের ক্ষতিপূরণের জন্য একটি তহবিল থাকবে। সেটা পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড থাকবে। সরকার, চালক সমিতি, মালিক সমিতি মিলে এই বোর্ড গঠন করা হবে।