সড়কে বেপরোয়া বাস ও ট্রাকের কারণে আহত হওয়া চার ব্যক্তির পরিবারের দিন কাটছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়।
রাজধানীতে বাসের চাপায় ডান পা হারানো তরুণী রোজিনা খাতুনের (১৮) অবস্থা সংকটাপন্ন। তাঁর ওই পায়ের ওপরের দিকে পচন ধরায় দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
বাসচাপায় আহত ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। দুর্ঘটনার পর হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি।
গোপালগঞ্জে বাসের সঙ্গে ট্রাকের ঘষায় ডান হাত হারানো খালিদ হোসেন তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন হাসপাতালের বিছানায়।
আর রাজধানীতে দুই বাসের রেষারেষিতে আহত আয়েশা খাতুন সাভারের সিআরপিতে চিকিৎসাধীন।
>
- রোজিনা খাতুনের অবস্থা সংকটাপন্ন।
- পুলিশ পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
- খালিদ হোসেন তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন হাসপাতালের বিছানায়।
- আয়েশা খাতুন সাভারের সিআরপিতে চিকিৎসাধীন।
এর আগে ৩ এপ্রিল দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানো কলেজছাত্র রাজীব হোসেন চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার দিবাগত রাতে মারা গেছেন।
বনানীতে শুক্রবার রাতে বিআরটিসির দোতলা বাসের চাপায় ডান পা হারানো গৃহকর্মী রোজিনা জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রোজিনার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক আবদুল গণি মোল্লাহ গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, জীবন বাঁচাতে প্রয়োজনে রোজিনার পায়ে আরও অস্ত্রোপচার লাগতে পারে। দুর্ঘটনায় তাঁর পায়ের চামড়া থেকে মাংসের স্তর পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। চামড়াটা মরে গেছে। আঘাতে মাংসপেশিও অকার্যকর হয়ে গেছে। কিডনি ও ফুসফুসে সংক্রমণের আশঙ্কাটাই এখন চিকিৎসকদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ। সে জন্য প্রতিদিন তাঁর আঘাতের জায়গাটায় ড্রেসিং করতে হবে। প্রয়োজনে আরও অস্ত্রোপচার লাগবে।
গতকাল পোস্ট অপারেটিভ কক্ষের বাইরে উদ্বিগ্ন স্বজনেরা রোজিনার জন্য সবার কাছে দোয়া চাইছিলেন। রোজিনার বাবা রসুল মিয়া বলেন, তাঁর মেয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। তাঁর একটাই চাওয়া, মেয়ে সুস্থ হয়ে উঠুক। তিনি দায়ী বাসচালকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।
ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার রসুল মিয়া পরের জমি চাষ করেন। শনিবার রোজিনা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বাসচালকের শাস্তি দেখতে চান।শুক্রবার বনানী চেয়ারম্যান
বাড়ির কাছে বিআরটিসির বেপরোয়া দোতলা বাসের ধাক্কায় পড়ে যান রোজিনা। চালক তাৎক্ষণিকভাবে বাসটি থামালেও পরে তাঁর পায়ের ওপর দিয়েই চালিয়ে দিলে তাঁর ডান পা আলাদা হয়ে যায়। চালক শফিকুল ইসলামসহ বিআরটিসির বাসটি আটক করা হয় বলে জানান বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বি এম ফরমান আলী।পলাশী এলাকায় বাসচাপায় আহত ট্রাফিক পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেনের অবস্থা এখনো সংকটজনক। তিনি স্কয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের যে বাসের চাপায় তিনি আহত হন, সেটির চালক নজরুল ইসলামকে গতকাল পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে জানা গেছে। দেলোয়ার ১৬ এপ্রিল পলাশী মোড়ে দায়িত্ব পালনকালে কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের ওই বাসটি উল্টো পথে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। বাসটি ঘুরে যাওয়ার সময় চাকার নিচে পিষ্ট হয় দেলোয়ারের পা।
দেলোয়ারের বড় ভাই আবুল কালাম শামীম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসকদের একটি বোর্ড তাঁদের জানিয়েছে দুর্ঘটনার দুই দিন পর দেলোয়ার হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। তাঁর আগেও একটি বাইপাস সার্জারি হয়েছিল। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হলে শরীরের ভেতরের রক্ত পাতলা করতে একটি ইনজেকশন দেওয়া হয়। কিন্তু পায়ের ক্ষত নিয়ন্ত্রণে রক্ত জমাট বাঁধা জরুরি। সে কারণে তারা যে মাত্রার ইনজেকশন প্রয়োগ করার কথা সেটা করতে পারছে না। চিকিৎসকেরা আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে এর ব্যয় বহন করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাঁরা চান সরকার এগিয়ে আসুক।
গোপালগঞ্জে ১৭ এপ্রিল বাসের সঙ্গে ট্রাকের ঘষায় ডান হাত হারানো খালিদ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। তিনি বাসচালকের সহকারী ছিলেন। গতকাল খালিদের বোন তামান্না আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাইয়ের একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। দুবার ড্রেসিংও করা হয়েছে। গেল দুই দিন ধরে প্রচণ্ড ব্যথা। ব্যথায় ভুল বকছেন। তাঁকে ডেকে বলেছেন, হাতের তালুটা চুলকিয়ে দিতে, কনুইয়ের ওপর কী বসেছে দেখতে। তিনি খেতে চান না। জোর করে খাওয়ানো হচ্ছে। সুস্থ হলে ভাইয়ের কৃত্রিম হাত যেন লাগানো হয়, সেই প্রতিশ্রুতি চান তামান্না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকের বিভাগীয় প্রধান শামসুজ্জামান বলেন, খালিদের অবস্থা ভালোর দিকে। মাস তিনেক গেলে কৃত্রিম হাত লাগানোর চেষ্টা করবেন চিকিৎসকেরা। ওই হাত দিয়ে সব কাজ করতে না পারলেও কিছু কিছু কাজ করতে পারবেন।
৫ এপ্রিল মেয়ে প্রথম শ্রেণির ছাত্রী আহনাব আহমেদকে স্কুলে দিতে যাওয়ার সময় নিউমার্কেট এলাকায় বিকাশ পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে আহত রিকশাযাত্রী আয়েশা খাতুন সাভারের সিআরপিতে চিকিৎসাধীন। গতকাল আয়েশার স্বামী তানজির আহমেদ বলেন, শনিবার প্রথমবারের মতো আয়েশাকে বসানোর চেষ্টা করা হয়। তিনি কয়েক মিনিট বসতে পেরেছেন। গতকালও এই চেষ্টা চালানো হয়। তিনি যেন অন্তত হুইলচেয়ারে চলাফেরা করতে পারেন, সে উপযোগী করতে চেষ্টা চলছে এখন।