সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর থেকে তাহিরপুর উপজেলায় যাওয়ার সড়কের দুটি জায়গায় এখনো হাঁটুসমান বন্যার পানি আছে।
সড়কের এই দুটি স্থান থেকে বিশেষ করে ছোট যানবাহন চলাচলের সময় ইঞ্জিনে পানি ঢুকে তা বন্ধ বা বিকল হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন চালক ও যাত্রীরা।
গতকাল সোমবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটির বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা অংশের দুর্গাপুর ও ওমরপুরের শক্তিয়ার খলা বাজারসংলগ্ন এলাকায় হাঁটুসমান বন্যার পানি আছে।
দুর্গাপুর এলাকায় প্রায় ২৫০ মিটার সড়কে পানি রয়েছে। ওমরপুরের শক্তিয়ার খলা বাজারসংলগ্ন এলাকায় প্রায় ১০০ মিটার সড়কে পানি আছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সড়কের এ দুটি অংশ দিয়ে চলাচলের সময় মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মতো ছোট বাহনগুলো বিপদে পড়ছে। ইঞ্জিনে পানি ঢুকে মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তখন যাত্রীদের পানির মধ্যেই নেমে যেতে হচ্ছে। যানবাহন ঠেলে পানি থেকে সড়কের শুকনা স্থানে নিতে হচ্ছে। তবে পিকআপ বা ট্রাকের মতো বড় যানবাহনগুলো এ ধরনের সমস্যায় খুব বেশি পড়ছে না।
গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে দুর্গাপুর অংশে সড়কের পানি মাড়িয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন আমিনা খাতুন নামের এক নারী। তিনি সুনামগঞ্জের একটি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে ফিরছিলেন। সড়কের পানি জমে থাকা অংশে মোটরসাইকেল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তাঁকে মোটরসাইকেল থেকে নেমে যেতে হয়।
আমিনা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, শরীর ভালো না। এ অবস্থায় পানি ভেঙে হেঁটে যেতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কিছুই করার নেই।
পানি জমে থাকা সড়ক পার হতে আমিনা খাতুনকে সাহায্য করছিলেন তাঁর ছেলে তোফাজ্জল মিয়া। তিনি বলেন, সড়কে জমে থাকা পানি পেরিয়ে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিল। মাঝামাঝি স্থানে ইঞ্জিনে পানি ঢুকে মোটরসাইকেল বন্ধ হয়ে যায়। তাই তাঁদের মোটরসাইকেল থেকে নেমে পানি মাড়িয়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে।
একই সময় সড়কের এ অংশে আরও কয়েকটি মোটরসাইকেলের পাশাপাশি সিএনজিচালিত অটোরিকশা বিকল হয়ে যেতে দেখা যায়।
ওমরপুরের শক্তিয়ার খলা অংশে দেখা যায়, বন্যার পানির স্রোতে সড়কের আরসিসি ঢালাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু জায়গায় রাস্তা ভেঙে গেছে। পানির নিচে রাস্তার কী হাল, তা চালকেরা না জানায় তাঁরা ঝক্কিঝামেলায় পড়ছেন।
বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কের দুটি অংশে বন্যার পানি থাকার অজুহাতে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন চালকেরা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
সুনামগঞ্জ সদরের সুরমা নদীর ওপর নির্মিত আবদুজ জহুর সেতু থেকে তাহিরপুর উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বের সড়কে মোটরসাইকেলে জনপ্রতি ৪০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে এ দূরত্বের ভাড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এ পথে একটি মোটরসাইকেলে চালকের পেছনে সাধারণত দুজন করে যাত্রী নেওয়া হয়। ক্ষেত্রবিশেষে তিনজন যাত্রীও বহন করতে দেখা গেছে।
সুনামগঞ্জ সদর থেকে মোটরসাইকেলে তাহিরপুরে যাচ্ছিলেন আরাফাত হোসেন নামের এক যাত্রী। তিনি কিছু জরুরি জিনিসের জন্য সুনামগঞ্জ সদরে এসেছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চালকেরা এখন দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছেন। ২০০ টাকার ভাড়া এখন ৪০০ টাকা। কমে তাঁরা যেতে রাজি হচ্ছেন না। তাঁরা বলছেন, রাস্তা খারাপ, ভাঙাচোরা। পথে পানি আছে। পানিতে ইঞ্জিন বিকল হওয়ার আশঙ্কা আছে।