খ্রিষ্টান–বৌদ্ধ সম্প্রদায়

সৎকারে নেই সরকারি ব্যবস্থা

ঢাকায় খ্রিষ্টানরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মরদেহ সমাহিত করেন। আর বৌদ্ধরা হিন্দুদের শ্মশানে মরদেহ দাহ করেন।

লাশ
প্রতীকী ছবি

মৃত্যুর পর খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের সৎকার বা সমাহিত করতে ঢাকায় সরকারি কোনো ব্যবস্থাপনা নেই। খ্রিষ্টধর্মের কেউ মারা গেলে এই সম্প্রদায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মৃতদেহ সমাহিত করে। আর পূর্ব বাসাবোতে হিন্দুদের একটি শ্মশানে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মৃত ব্যক্তিদের দাহ করা হয়।

ঢাকায় বসবাসরত খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, সরকারিভাবে যেন মৃতদেহ সৎকার ও সমাহিত করার ব্যবস্থা করা হয়। তাঁদের অভিযোগ, অনেক দিন ধরেই তাঁরা এই দাবি জানিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়নে সরকারের কোনো পদেক্ষেপ তাঁরা দেখতে পাননি। তাঁরা বলেছেন, আবারও তাঁরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত আবেদন করবেন।

জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত এক বছরের মধ্যে এমন কোনো আবেদন তিনি পাননি। তিনি বলেন, আবেদন পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকায় বৌদ্ধদের মরদেহ দাহ করার জন্য আলাদা কোনো শ্মশান নেই। হিন্দুদের একটি শ্মশানে মরদেহ দাহ করে বৌদ্ধরা। পূর্ব বাসাবোর রাজারবাগে এই শ্মশানটি অবস্থিত।

ওই শ্মশান পরিচালনা কমিটির সভাপতি চিত্তরঞ্জন দাস প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর জানামতে ষাটের দশক থেকেই হিন্দুদের শ্মশানে বৌদ্ধদের মরদেহ দাহ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি বুদ্ধপ্রিয় মহাথেরো প্রথম আলোকে বলেন, আলাদা শ্মশানের জন্য তাঁরা সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সাড়া মেলেনি। আবারও আবেদন করবেন বলে জানান।

নিজ ব্যবস্থাপনায় মরদেহের সৎকার করেন খ্রিষ্টানরা

খ্রিষ্টানদের সমাহিত করার জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত কোনো জায়গা নেই। তবে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ঢাকার তিনটি স্থানে মরদেহ সমাহিত করা হয়। এর মধ্যে আয়তনের দিক থেকে সবচেয়ে বড় ওয়ারী খ্রিষ্টান কবরস্থান। বাকি দুটি হলো তেজগাঁও খ্রিষ্টান কবরস্থান, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধসংলগ্ন (বছিলা) এলাকায় সেন্ট যোসেফ খ্রিষ্টান কবরস্থান।

ওয়ারী খ্রিষ্টান কবরস্থানের আয়তন ১৬ বিঘা। আগে এখানে মৃতের সমাধিস্থল সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু এখন নেই। চাইলেও এই ধর্মাবলম্বীদের কেউ আজীবনের জন্য বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্বজনদের সমাধি সংরক্ষণ করতে পারবেন না। তবে আয়তনের দিক দিয়ে বড় হওয়ায় ছয় থেকে সাত বছর পরপর একটি সমাধির ওপর আরেকজনকে সমাহিত করা হয়।

গত এক বছরের মধ্যে এমন কোনো আবেদন তিনি পাননি। তিনি বলেন, আবেদন পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মো. নুরুল ইসলাম, সচিব, ধর্ম মন্ত্রণালয়

তেজগাঁও ধর্মপল্লিসংলগ্ন যে সমাধিস্থান রয়েছে, সেখানে কেবল ওই ধর্মপল্লির (চার্চ) সদস্যদের সমাহিত সুযোগ আছে। এটি কেবল ক্যাথলিকদের। এখানে জমির পরিমাণ দুই বিঘা। আর মোহাম্মদপুরের বছিলায় সেন্ট যোসেফ খ্রিষ্টান কবরস্থানেও শুধু ক্যাথলিকদের সমাহিত করার ব্যবস্থা আছে। এটিও দুই বিঘা জমির ওপর অবস্থিত।

বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও প্রথম আলোকে বলেন, ওয়ারীর খ্রিষ্টান কবরস্থানটি সংরক্ষণ এবং সৌন্দর্যবর্ধনে করপোরেশনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকার বা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের জন্য কবরস্থানের জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

এক যুগেও চালু হয়নি শ্মশানের গ্যাসসংযোগ

ঢাকায় হিন্দুধর্মাবলম্বীদের জন্য বড় শ্মশানটি পোস্তগোলায়। পরিবেশবান্ধব উপায়ে মরদেহ দাহ করতে ২০০৮ সালে সেখানে গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত এটি চালু হয়নি। এই শ্মশানে মাসে ৭০–এর বেশি মরদেহ দাহ করা হয়। আর কামরাঙ্গীরচরের শ্মশানে মাসে ২০টি মরদেহ দাহ করা হয়।

শ্মশানের মহরার অমরেশ মণ্ডল জানান, হিন্দুদের মধ্যে যাঁরা মরদেহ সমাহিত করেন, তাঁদের জন্য এই শ্মশানে দেড় একর জায়গা আছে। এই স্থানে ২০০ মরদেহ সমাহিত করার জায়গা আছে। এখন আর এখানে কোনো সমাধি স্থায়ী রাখার ব্যবস্থা নেই। দুই বছর পরপর একটি সমাধির ওপর আরেকজনকে সমাহিত করা হয়।