স্লুইসগেটটি এখন 'গলার কাঁটা'

ময়লা জমে অকেজো হয়ে পড়েছে স্লুইসগেটটি। বুধবার বিকেলে সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুরের বসরতনগর গ্রামের ছোট কুমিরা খাল এলাকায়। প্রথম আলো
ময়লা জমে অকেজো হয়ে পড়েছে স্লুইসগেটটি। বুধবার বিকেলে সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুরের বসরতনগর গ্রামের ছোট কুমিরা খাল এলাকায়।  প্রথম আলো

সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়নে শুষ্ক মৌসুমে কৃষিতে সেচের জন্য ২০০৩ সালে স্লুইসগেটটি নির্মাণ করেছিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। স্লুইসগেট দিয়ে আটকানো পানি কয়েক বছর সেচের কাজেও ব্যবহারও করেছিলেন কৃষকেরা। কিন্তু গত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেটি এলাকার মানুষের জন্য ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এখন প্রতিবছর বর্ষায় টানা বৃষ্টিতে শুধু সৈয়দপুরের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন বারৈয়ারঢালা, মুরাদপুর ও সীতাকুণ্ড পৌরসভার বেশির ভাগ গ্রাম ডুবে যায়।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়নের বসরতনগর গ্রামে ছোট কুমিরা খালের ওপর এ স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। স্থানীয়দের কাছে এটি রাবার ড্যাম হিসেব পরিচিত।

স্থানীয় লোকজনের দাবি, ১০০ ফুটের খাল দখল হতে হতে এখন ৩০ ফুটের নিচে নেমে গেছে। এ ছাড়া পলি জমে খালের গভীরতা একেবারে কমে গেছে। ফলে খালটি দখলমুক্ত করে খনন করা জরুরি। পাশাপাশি ও স্লুইসগেট অপসারণ করে সেখানে সেতু নির্মাণ করতে হবে।

 পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউেবা) ও উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, খালটি খননের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাব পাস হলে জুনের মধ্যে খনন করা হবে। খননকাজ শুরু হলে সিট অনুযায়ী দখলমুক্ত করে খালটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, স্লুইসগেটের সামনে খালের পানিতে ভাসমান ময়লার স্তূপ, যা পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে। স্লুইসগেটের তিনটির একটিরও কপাট নেই। কপাট আটকানোর রড ছাড়া অন্যান্য যন্ত্রাংশও নেই। খালের পানি আটকে স্লুইসগেটের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে সেখানে চারটি সিমেন্টের পাইপ বসানো।

স্লুইসগেটের নামফলকে লেখা রয়েছে, নির্মাণ কাল ২০০২ থেকে ২০০৩ সাল। এতে ব্যয় হয়েছিল ১৯ লাখ ২১ হাজার ৫৯৬ টাকা। বাস্তবায়ন করেছিল এলজিইডি।

>

বর্ষায় টানা বৃষ্টিতে শুধু সৈয়দপুর, বারৈয়ারঢালা, মুরাদপুর ও পৌরসভার বেশির ভাগ গ্রাম ডুবে যায়

কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা আবুল বশর ও গোবিন্দ জলদাসের সঙ্গে। তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, চোরের দল রাতের আধারে স্লুইসগেটের কপাটসহ যাবতীয় যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে গেছে। ফলে শীতে সেখানে পানি জমে থাকে না। বর্ষায় পৌরসভার ময়লা এসে গেটের কপাটে জড়ো হয়ে পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত করে। ফলে পানি আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

তাঁরা আরও বলেন, খালটির দুই তৃতীয়াংশ দখল করে নিয়ে সেখানে গাছ লাগিয়েছেন স্থানীয়দের অনেকে। ফলে পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত সাগরে যেতে পারে না। তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

আবদুল জলিল, সেকান্দর মিয়াসহ স্থানীয় কয়েকজন কৃষক বলেন, বর্ষায় তাঁদের ধান চাষে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিবারই ঢলের পানিতে ডুবে ধান পচে যায়। দুই বছর ধরে বেশির ভাগ কৃষক বর্ষায় চাষাবাদ বন্ধ করে দিয়েছে।

সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম নিজামী বলেন, তাঁর ইউনিয়নটি কৃষিপ্রধান। দুটি খালের স্লুইসগেটের কারণে বর্ষায় ইউনিয়নের বাসিন্দারা জলাবদ্ধতার শিকার হন। বিশেষ করে ছোট কুমিরা খালের স্লুইসগেটটি  গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, স্লুইসগেটটি ইতিমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। তবে স্লুইসগেটের চেয়েও খাল খনন জরুরি হয়ে পড়েছে। বর্ষায় ভাটিতে পানি না সরার কারণে উজানে প্লাবনের সৃষ্টি হয়। স্লুইসগেটটি নির্মাণের পর সেখানে কৃষকদের নিয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি করা হয়েছিল। কয়েক বছর যেতে না যেতে কমিটি অকেজো হয়ে যায়। ফলে অব্যবস্থাপনায় দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সীতাকুণ্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনিছ হায়দার খান প্রথম আলোকে বলেন, সীতাকুণ্ডের ছোটকুমিরাসহ পাঁচটি খালের খননসহ সংস্কারের জন্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। তিনি আশা করছেন, দ্রুততম সময়ে বরাদ্দ পাওয়া যাবে। আগামী জুনের আগেই সংস্কার সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

ইউএনও মিল্টন রায় বলেন, খাল খননকাজ শুরু হলে দখল করা অংশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে খালটি উদ্ধার করা হবে।