স্মারক স্তম্ভে দোকান নির্মাণ

চট্টগ্রাম নগরের এম এ আলী সড়কের মোড়ে। সৌরভ দাশ
চট্টগ্রাম নগরের এম এ আলী সড়কের মোড়ে।  সৌরভ দাশ

প্রতিষ্ঠার দেড় শ বছর স্মরণীয় করে রাখতে স্মারক স্তম্ভ নির্মাণ করেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। নগরের এম এম আলী সড়কের মুখে এই স্তম্ভ করা হয়। এর পাশে ছোট্ট উদ্যানও করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে এখন সৌন্দর্যবর্ধনের নামে খাবারের দোকান নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে সিটি করপোরেশন। 

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নগরের ষোলশহর দুই নম্বর গেট হতে জিইসি মোড়, গরীবউল্লাহ শাহ মাজার মোড়, লালখানবাজার হয়ে ইস্পাহানী মোড় পর্যন্ত সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেয়। এসব এলাকার সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত ১ অক্টোবর চুক্তি করে সিটি করপোরেশন। পাঁচ বছরের জন্য এই চুক্তি হয়। 

প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে এসটিডি ইন্টারন্যাশনাল ও অ্যাড গার্ডেন। এর মধ্যে এসটিডি ইন্টারন্যাশনাল হচ্ছে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাবউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী ওরফে সাজিদের প্রতিষ্ঠান এবং অ্যাড গার্ডেন হচ্ছে নগর যুবলীগ নেতা সনৎ বড়ুয়ার। চুক্তির পর প্রতিষ্ঠান দুটি নির্ধারিত এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু করে। এর মধ্যে স্মারক স্তম্ভের এলাকায় নার্সারি টি অ্যান্ড কফি হাউস নামের খাবার দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি এই দোকান চালু হয়েছে।

স্মারক স্তম্ভ এলাকায় দোকান বসানোর খবর শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম। তাঁর মেয়াদের সময় ২০১৩ সালের ২১ জুন চট্টগ্রাম পৌরসভার ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই স্মারকস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছিল। 

জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর স্মারক স্তম্ভের বাতিগুলো খুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে বর্তমান মেয়র এটির সৌন্দর্যবর্ধনে সুদৃষ্টি দেবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। 

>সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার দেড় শ বছরে স্থাপিত স্মারক স্তম্ভের পাশে দোকান নির্মাণের অনুমতির অভিযোগ।

সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশনের দেড় শ বছর প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে এই স্মারক স্তম্ভ করা হয়েছিল। যাতে মানুষ এক নজরে দেখে সিটি করপোরেশনের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস জানতে পারে। এটি সংরক্ষণ করা উচিত। 

গতকাল বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, স্মারক স্তম্ভ এলাকায় খাবারের দোকানের পাশে আট-দশটি চেয়ার রাখা হয়েছে। সবগুলো আসন ক্রেতাভর্তি। এই দোকানে বিভিন্ন ধরনের খাবার রয়েছে। দোকানটিতে বিদ্যুতের মিটারও বসানো হয়েছে। এদিকে স্মারক স্তম্ভও পড়ে আছে অযত্নে-অবহেলায়। উদ্বোধকের ‘উ’ খসে পড়েছে। ‘স্মারক স্তম্ভ’-এর ‘স্ত’ ছাড়া আর কিছু নেই। 

দোকানের দুই দোকানি বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি। শুধু বলেন, সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিয়ে তাঁরা দোকান নির্মাণ করেছেন। 

সৌন্দর্যবর্ধনের দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠান অ্যাড গার্ডেনের সনৎ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, জায়গাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। তাঁরা এখন সেখানে বাগান ও আলোকায়ন করেছেন। নিরাপত্তাবেষ্টনী দিয়েছেন। নিরাপত্তারক্ষী রেখেছেন। এসব পরিচালনার জন্য একটা খরচ আছে। তাই দোকান নির্মাণ করেছে। আর তা সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিয়ে করা হয়েছে। তবে সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ এ কে এম রেজাউল করিম দাবি করেছেন, তাঁরা নকশাবহির্ভূতভাবে দোকান নির্মাণ করেছে। সৌন্দর্যবর্ধনের নকশায় দোকান নির্মাণের বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ইতিমধ্যে সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হয়েছে। না হলে তা উচ্ছেদ করা হবে।