ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৫ প্রকাশ

স্বাস্থ্য সূচকেই নারীরা এগিয়েছে বেশি

২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ চার ধাপ এগিয়েছে। স্বাস্থ্য ও আয়ুষ্কাল সূচকে বাংলাদেশ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রথম আর ২০০৬ সালের পর যতগুলো দেশ এগিয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ সারা বিশ্বেই এখন দ্বিতীয়। এই অঞ্চলে ২০০৬ সালের পর থেকে বাংলাদেশটিতে ধারাবাহিকভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারীরা। তবে নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রকাশিত ‘দ্য গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এ অগ্রগতির কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৪৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৪তম। গত বছর ১৪২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৬৮তম। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। প্রতিবেদনে অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনটি বলছে, রাজনৈতিক ক্ষমতায়নেও বাংলাদেশ উন্নতি করেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়ন অব্যাহত আছে। শিক্ষাক্ষেত্রে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি এবং উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণ বাড়ার ফলে শিক্ষা সূচকেও বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। ৩৮৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য খাতে ভালো অবস্থানে থাকা দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম আছে। এ তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়া নেপাল, পাকিস্তান ও বতসোয়ানার নাম আছে।
অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুযোগ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩০তম। শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ৬০ শতাংশ নারী শ্রমবাজারে থাকলেও পুরুষ আছে ৮৭ শতাংশ। এ খাতে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৭তম।
অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুযোগের সূচকে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান-বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক রুশিদান ইসলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা সূচকে বাংলাদেশের নারীরা ভালো করছেন। কারণ, এ ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের আওতায় সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে নারীরা অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু নারীদের অর্থনৈতিক অংশগ্রহণের জন্য ভালো মানের কর্মসংস্থান যথেষ্ট পরিমাণে নেই। নারীরা প্রধানত খানা, গৃহ বা পারিবারিক কাজে বেশি যুক্ত হচ্ছেন। এতে নারীর আয় কম থাকে এবং পারিবারিক কাজের ফলে যে আয় করে, তাতে নারীর নিয়ন্ত্রণও ততটা থাকে না। তাই নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ ও সুযোগ বাড়ানোর জন্য নারীদের পারিবারিক কাজের পাশাপাশি মজুরিভিত্তিক কাজে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ভর্তির ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষ বা ছেলে শিশুর তুলনায় এগিয়ে আছে। তবে উচ্চশিক্ষায় নারীরা একটু পিছিয়ে আছেন। আয়ুষ্কালের দিক থেকেও নারীরা পুরুষের তুলনায় এগিয়ে। নারীরা গড়ে বাঁচে ৬২ বছর। আর পুরুষ বাঁচে ৬০ বছর। জাতীয় সংসদে নারীর অংশগ্রহণ ২০ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে পুরুষের অংশগ্রহণ ৮০ শতাংশ। মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ে ৭ শতাংশ নারী (পুরুষ ৯৩ শতাংশ) দায়িত্ব পালন করছেন। গত ২২ বছর ধরে বাংলাদেশে নারীরা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম প্রথম আলোকে প্রতিবেদনটি প্রসঙ্গে বলেন, নাগরিক অধিকার আদায়ে, সামাজিক অবস্থানে, সম্পত্তি ভোগের ক্ষেত্রে বা প্রকৃত অর্থে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে এখন পর্যন্ত নারী-পুরুষে সমতা আসেনি। অধিকসংখ্যক নারী পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে দেশে নারী নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তবে গণনারী আসলেই কতটুকু ক্ষমতায়িত হচ্ছে, তা-ও দেখতে হবে।